স্টাফ রিপোর্টার ॥ গায়েব হয়ে যাওয়া বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের জেনারেটর কেলেংকারির ঘটনায় এবার তদন্তে নেমেছেন দুদক কর্মকর্তারা। ফলে দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তারা এবার দুদকের কাছে ফেঁসে যাচ্ছেন। দুর্নীতির পুরো ঘটনাটি ধামাচাঁপা দেয়ার জন্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বুধবার রাতে গোপন বৈঠক করে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এক নেতার স্মরনাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সূত্রমতে, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর “বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কোটি টাকার জেনারেট গায়েব” শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিসিসি কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে তদন্ত কমিটি করে অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান এবং পানি শাখার কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান স্বপনকে কৌশলে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। এতে করে অভিযুক্তরা প্রাথমিকভাবে পার পেয়ে গেছে বলে মনে করলেও বুধবার শেষ কার্যদিবসে দুদক কর্মকর্তারা তদন্তের জন্য সিটি কর্পোরেশনে এসে প্রায় এক ঘন্টা অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ ঘটনার পর থেকে আবারও ওই দুর্নীতির বিষয়টি লাইম লাইটে চলে আসে।
সূত্রগুলো জানিয়েছেন, গত ২৩ মার্চ বরিশাল দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মোঃ সিফাত উদ্দিন স্বাক্ষরিত দুটি নোটিশ সিটি কর্পোরেশনে প্রেরণ করা হয়। একটিতে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে জেনারেটর ক্রয়ের কাজে ৪০ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণসহ জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে চিঠি প্রেরণ করা হয়। একইসাথে জেনারেটর ক্রয়ের বরাদ্দপত্রের কপি, দরপত্র প্রদানের আদেশ, পত্রিকার কপিসহ মোট ১৫টি বিষয়ের উপর কাগজপত্র প্রেরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আরেকটি চিঠিতে সুষ্ঠ অনুসন্ধানের স্বার্থে বক্তব্য শ্রবন এবং গ্রহণের জন্য ২৮ মার্চ তারিখ নিধারন করে নির্বাহী প্রকৌশলীর উপর নিভর্রশীল স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নামে অর্জিত সম্পদের সকল রেকর্ড এবং কাগজপত্র প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০-১১ অর্থবছরে নগরীতে ব্যাপক লোডশেডিংয়ের সময় পানির পাম্পগুলো সচল রাখার জন্য তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ১০টি জেনারেটর সরবরাহের আবেদন করেন। সেমতে বরিশাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিদেশী অর্থায়নে প্রায় দুইকোটি টাকা বরাদ্দ আনে। ওইবছরই স্থানীয় ঠিকাদার মনজুরুল আহসান ফেরদৌসকে দরপত্রের মাধ্যমে জেনারেটর ক্রয়ের কার্যাদেশ দেয়া হয়।
সূত্রমতে, জনস্বার্থে ওইসব মেশিন ক্রয় থেকে শুরু করে স্থাপন পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াতেই জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়। যেসব মেশিন ক্রয় করা হয়েছিলো তা অত্যান্ত নিন্মমানের চায়না মেশিন। যার সর্বোচ্চ দর ছিল ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। সে হিসেবে ১০টি মেশিনের সর্বোচ্চ দাম হয় ১০ লাখ টাকা। বাকি অর্থ সংশ্লিষ্টরা মিলে আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে পুরো বিল আটকে দেয় মেয়র হিরন। এরইমধ্যে হিরনের মৃত্যুর পর পরই পাল্টে যায় চিত্রপট। কোন এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় ভুয়া জেনারেটরগুলো সক্রিয় দেখিয়ে কোটি টাকার বিল উত্তোলন করে নেয়া হয়। স্থাপনকৃত জেনারেটরগুলো অতিনিন্মমানের হওয়ায় স্থাপনের কয়েক মাসের মধ্যেই তা অকেজো হয়ে পরে। আর বর্তমানে মেশিনগুলো কি অবস্থায় রয়েছে তা কেউ বলতে পারছেন না। এমনকি জেনারেটরগুলো আদৌ বহাল আছে কিনা তারও কোন হদিস নেই।
Leave a Reply