করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে ছাপা শুরু হচ্ছে আগামী শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবই। দরপত্র, কার্যাদেশ, চুক্তিসই পর্ব শেষে আগামী সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করবে দায়িত্ব পাওয়া মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো। ৯০ দিনে প্রায় ৩৫ কোটি নতুন পাঠ্যবই ছাপানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। করোনার কারণে বেশ কয়েকবার পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য দরপত্র আহ্বান করেও তা চূড়ান্ত করা যায়নি। অনেকটা অশ্চিয়তায় পড়েছিল ২০২১ সালের পাঠ্যবই বিতরণ। এখন সেই আশঙ্কা কাটিয়ে আগামী বছরের নতুন পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে এনসিটিবি।
গতকাল বুধবার এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা আমাদের সময়কে জানান, ২০২১ সালের প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এনসিটিবি। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সব বই ছাপা ও সরবরাহ শেষ করা হবে। সর্বোচ্চ ৯০ দিনে এ বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করার লক্ষ্য এনসিটিবির। আগামী সপ্তাহ শেষে পুরোদমে শুরু হবে বই ছাপানো।
এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ৬ষ্ঠ-৯ম শ্রেণির জন্য ব্রেইল বইসহ (৯ হাজার ৫০৪টি) ২৪ কোটি ৪১ লাখ ২২ হাজার ৩৪৯টি পাঠ্যবই ছাপানো হবে। দাখিলের জন্য ৩ কোটি ৮১ লাখ ৭২ হাজার ৬১৫টি, এবতেদায়ির ২ কোটি ৪১ লাখ ৫৯ হাজার ৬০টি এবং মাধ্যমিকের ১৭ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৯১টি পাঠ্যবই। এ ছাড়া প্রাথমিকের জন্য প্রায় ১০ কোটি পাঠ্যবই।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০১০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বছরের প্রথম দিন পাঠ্যপুস্তক উৎসব করে বিনামূল্যের বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। চলতি বছর করোনার কারণে ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষাবর্ষ কীভাবে শেষ হবে সেটি নিয়েও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবুও এনসিটিবি জানিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপানোর কাজে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য বেশিরভাগ কাজ অনলাইনে শেষ করেছেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে পিছিয়ে গেছে নতুন কারিকুলাম প্রবর্তনের কার্যক্রম। আগামী বছর প্রথম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরিমার্জিত কারিকুলামে নতুন পাঠ্যবই দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে কাজ শেষ করতে পারেননি। ফলে আগামী বছরের পরিবর্তে ২০২২ সালে নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবই দেওয়া হবে শিশুদের হাতে। তবে ২০২৩ সালের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন কারিকুলাম ও পাঠ্যবই প্রবর্তনের লক্ষ্যমাত্রা বহাল আছে। নতুন বইয়েই ২০২৪ সালে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার বই ছাপানোর কাজ পাওয়া মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করা হচ্ছে কিনা তা নজরদারিতে রাখবে এনসিটিবির আলাদা পর্যবেক্ষক দল।
আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১০ বছরে ৩৩১ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৬১৬ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আর ২০২১ সালে ছাপানো হবে প্রায় ৩৫ কোটি বই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনসিটিবি প্রতিবছর বিশাল এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে, যা সারাবিশ্বে সুনাম বয়ে এনেছে।
Leave a Reply