দখিনের খবর ডেক্স ॥ বাজার নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি কোন ভূমিকাই রাখতে পারছে না। বরং বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি ক্রমশই গুরুত্ব হারাতে বসেছে। কারণ বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থা এখন অনেক বড়। ওই বাজার চাহিদায় সীমিত মজুদ দিয়ে কিছুই হবে না। বরং বাজার নিয়ন্ত্রণে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে টিসিবির নিজস্ব মূলধন থাকা দরকার। আর ওই মূলধন পেলে টিসিবি স্বাধীনভাবে পণ্য ক্রয় এবং ভোক্তাপর্যায়ে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অতিসম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, বিপণন ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে বার্ষিক প্রায় ২০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। আর শুধুমাত্র রমজান মাসে ওই চাহিদা দাঁড়ায় প্রায় ১৮ হাজার টন। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে টিসিবি আমদানি করেছে মাত্র ১শ টন। দেশে ছোলার বার্ষিক চাহিদা এক লাখ টন। শুধু রমজান মাসেই এর চাহিদা দাঁড়ায় ৮০ হাজার টন। চাহিদার বিপরীতে রমজান উপলক্ষে কম দামে বিক্রির জন্য মাত্র ২ হাজার টন ছোলা আমদানি করেছে সরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), যা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। তাছাড়া ভোজ্যতেল, চিনি ও ডালের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যও টিসিবি আমদানি করেছে যৎসামান্য। ওই অল্পসংখ্যক পণ্য নিয়েই পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গত ৬ মে থেকে সারা দেশে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। সংস্থাটির বিক্রয়কেন্দ্র. পরিবেশক ও ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে ক্রেতারা বাজারদরের চেয়ে বেশ কম মূল্যে পণ্য কিনতে পারছেন।
সূত্র জানায়, টিসিবি এবার একজন ভোক্তাকে ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৫৫ টাকা দরে সর্বোচ্চ ৪ কেজি মসুর ডাল (মাঝারি আকার), প্রডতি লিটার ৮৫ টাকা দরে সর্বোচ্চ ৫ লিটার সয়াবিন তেল, প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি ছোলা এবং প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে সর্বোচ্চ এক কেজি খেজুর দেয়া হচ্ছে। ১৮৪টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে দেশব্যাপী ওসব পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকায় ৩২টি ট্রাক, চট্টগ্রামে ১০টি এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ৫টি ও জেলা সদরে ২টি করে ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা শহরের যেসব স্থানে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক রয়েছে সে স্থানগুলো হলো- সচিবালয় গেট, প্রেসক্লাব, কাপ্তান বাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক, সাইন্সল্যাব মোড়, নিউমার্কেট তথা নীলক্ষেত মোড়, শ্যামলী অথবা কল্যাণপুর, জিগাতলা মোড়, খামার বাড়ি, কলমীতলা বাজার, কচুক্ষেতের রাজনীগন্ধা সুপার মার্কেটের সামনে, আগারগাঁও তালতলা ও নির্বাচন কমিশন অফিস, রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স উত্তরা, মিরপুর-১নং মাজার রোড, শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ বাজার, বাসাবো বাজার, বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল, বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বর, মহাখালী কাঁচাবাজার, শেওড়াপাড়া বাজার, দৈনিক বাংলা মোড়, শাহজাহানপুর বাজার, জকিরাপুল বাজার ও আইডিয়াল জোন, মতিঝিল বকচত্বর, খিলগাঁও তালতলা বাজার, রামপুরা বাজার, মিরপুর-১০ গোলচত্বর, আশকোনা হাজি ক্যাম্প, মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজার, দিলকুশা ও মাদারটেক নন্দীপাড়া কৃষি ব্যাংকের সামনে। তাছাড়া টিসিবির ২ হাজার ৭৮৪ ডিলার এবং নিজস্ব ১০টি খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি চলছে।
এদিকে টিসিবির সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থাটির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানান, ওসব পণ্য ছাড়াও টিসিবির গোডাউনে আপদকালীন কিছু মজুদ থাকে। কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য টিসিবির অনুকূলে বাজেটে কিছু অর্থ বরাদ্দ রাখার আবেদন করা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বাজার সহনশীল রাখার জন্য টিসিবি শুধু একা কাজ করে না। এর সঙ্গে আরো আছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, ট্যারিফ কমিশন, ভোক্তা অধিকার ও সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত কাজ। টিসিবির কাজ হচ্ছে ডিলারদের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা। টিসিবি সেটা করছে।
Leave a Reply