নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি, সুদক্ষ ও চৌকস নাবিক তৈরি করতে হবে। পাশপাশি নৌ-শিক্ষার আধুনিকায়ন, নদী দূষণ ও দখল বিরত রাখার ক্ষেত্রে সকলের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা জরুরি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএ ভবনে ‘বিশ্ব নৌদিবস-২০২০’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বরিশাল টু ঢাকাসহ দেশের সকল নৌপথকে আরও জনপ্রিয়, আরামপ্রদ ও সাশ্রয়ী করতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যাক্রমে বাস্তবায়ন করা গেলে সড়ক ব্যবস্থার উত্তম বিকল্প হিসেবে নৌপথ অধিক গুরুত্ব পাবে। অবশ্য এর জন্য নৌপথে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন- ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে নৌখাতের উন্নয়নের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেন। যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান রয়েছে। নদী খননের উদ্দেশে গত ১০ বছরে বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জন্য আমদানি করা হয়েছে পর্যাপ্ত ড্রেজার এবং সহায়ক জলযানসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। এসব ড্রেজারের সাহায্যে নদী খনন ও পলি অপসারণ কাজ অব্যাহত রয়েছে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন- ‘স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই নদীমাতৃক বাংলাদেশের উন্নয়নে নৌপথকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌপরিবহন পরিদপ্তর গঠন করেন, যা পরবর্তীতে অধিদপ্তরে রূপলাভ করেছে। অধিদপ্তরের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে নতুন নতুন পদ সৃজন করে নতুন নিয়োগবিধি প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। সরকারি সেবা আরও সহজ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে অনলাইন কার্যক্রমের বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি সরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের সেবাকে আরও সহজ ও জনমুখী করবে।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের মেরিন একাডেমির পাশাপাশি দেশের সিলেট, বরিশাল, পাবনা এবং রংপুর এ চারটি অঞ্চলে আরও চারটি মেরিন একাডেমি কার্যক্রম শুরু করেছে যার মাধ্যমে নৌখাতে আরও জনবল বৃদ্ধি পাবে।’ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী এই মন্ত্রী বলেন- ‘সমুদ্র সীমাবেষ্টিত হওয়ায় সুনীল অর্থনীতির (ব্লু ইকোনমি) অপার সম্ভাবনা ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। নৌপথ ও সমুদ্র অর্থনীতি আমাদের অন্যতম শক্তিশালী উৎস হিসেবে অচিরেই আত্মপ্রকাশ করবে। সুনীল অর্থনীতি পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে আমাদের কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একটি সবল নীতি কাঠামো গঠন করা প্রয়োজন। এ কাজ সম্পাদনের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর এজেডএম জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক।
তিনি বলেন- সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে বিনিয়োগের বেশির ভাগই আসতে হবে বেসরকারি খাত থেকে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যথোপযুক্ত প্রণোদনা ও নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালা গ্রহণ করা হবে। নতুন জ্ঞান, প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ আনার জন্য সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের ভূমিকা বিস্তৃত করা হবে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের ব্লু ইকোনমি নিয়ে কাজ করার প্রস্তুতি নিতে তিনি আহ্বান জানান। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি অর্থাৎ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ২০৬৪ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ১৯৭৩ সালে ছিল মাত্র ১২০ মার্কিন ডলার। ‘আমাদের উন্নয়নকে বারবার বাধাপ্রাপ্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা তা কাটিয়ে উঠছি যা দেশবাসীর কাছে দৃশ্যমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপ্নপুরুষ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুমাত্রিক নেতৃত্বে ভর করে আমরা আমাদের রূপকল্পগুলো বাস্তবায়নে জোর কদমে অগ্রসর হচ্ছি।’
Leave a Reply