কাজী জাহাঙ্গীর ॥ আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) ও বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। আওয়ামী লীগের সাথে আতাঁত করে পিঠ বাঁচানো সুবিদাভোগী বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা সুচতুর এই নেতা এবার জন্ম দিয়েছেন নয়া বিতর্কের। ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে দলীয় এক কর্মী মন্তব্য করায় তাকে চক্ষু তুলে নেওয়ার হুমকি এবং জেলা উত্তর যুবদলের কমিটিতে তার অনুসারীর পদ ধরে রাখতে পদ প্রত্যাশী অপর এক নেতাকে নিজ গুন্ডা বাহিনী দিয়ে মারধর করে দল ও দলের বাইরে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন এই নেতা।
সম্প্রতি তার হুমকি প্রদানের একটি অডিও দখিনের খবরের হাতে এসে পৌছায়। অডিওতে শোনা যায় আকন কুদ্দুসর রহমান দলীয় এক কর্মীকে ফোন করে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি ওই ব্যক্তিকে ফেসবুকে তাকে নিয়ে মন্তব্য করায় চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দেন এবং তিনি দলের কাউকে পরোয়া করেন না বলেও দম্ভোউক্তি প্রকাশ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আকন কুদ্দুসের হুমকির শিকার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম মনিরুল ইসলাম। তিনি গৌরনদী উপজেলা যুবদল নেতা। হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় এক প্রোগ্রামের ছবির সাথে আকন কুদ্দুসের ছবি যুক্ত করে তার অনুসারী ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে লিখে দেয় ঢাকার রাজপথে আকন কুদ্দুসুর রহমান। অথচ ওই প্রোগ্রামে উপস্থিতই ছিলেন না কুদ্দুস। যা ওই ছবির কমেন্টসে লিখেন মনিরুল। আর এতেই বেজায় ক্ষিপ্ত হন কুদ্দুস। বিষয়টি দলের উর্দ্ধতন নেতাদের জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে চলতি মাসের ৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বরিশাল প্রেসক্লাবে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবদলের এক সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় নিজ বক্তব্যে উত্তর জেলা যুবদলের আহবায়ক হওয়ার প্রস্তাব মূলক দাবী করেন গৌরনদী উপজেলা যুবদলের ১ নং যুগ্ম আহবায়ক গোলাম মোর্শেদ মাসুদ। সভা শেষে গৌরনদী ফেরার পথে নগরীর ফকিরবাড়ি রোডে বসে তার উপর হামলা চালায় কয়েক জন দুর্বৃত্ত। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিছন থেকে আঘাত করে তাকে জখম করে। আহত যুবদল নেতা মাসুদ বলেন, আঘাতে লুটিয়ে পড়ার আগে তিনি শুধু শুনেছেন হামলাকারীদের কোন একজন বলছে “কাজ হয়ে গেছে কুদ্দুস ভাইকে ফোন দে”। হামলার কারন হিসাবে মাসুদ বলেন, বর্তমান উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি মাহফুজ মোল্লা আকন কুদ্দুসের ব্যক্তিগত সহকারী বলা চলে। কারন কুদ্দুসের ব্যবসাসহ সকল কাজকর্ম দেখাশুনা করেন তিনি। আমি উত্তর জেলা যুবদলের আহবায়ক পদ দাবী করায় স্বাভাবিক কারনেই তার খুব লেগেছে। যে কারনে আমার উপর এই হামলা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি দলীয় বিধায় আমি দলের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে থানা পুলিশ করিনি। দলের সিনিয়র নেতারা বিষয়টি অবগত আছেন। আশা করছি দলই এর বিচার করবে।
গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির একাধিক সুত্র জানিয়েছেন, বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা কুদ্দুস অত্যাচারে অতিষ্ঠ। দলের একাধীক নেতা জানান, দলের হাইকমান্ড যদি জহির উদ্দিন স্বপনকে দলীয় কার্যক্রমে দ্রুত সম্পৃক্ত না করতো তাহলে বিএনপির ঘাটি খ্যাত গৌরনদী-আগৈলঝাড়া বিএনপি আজ বিলিন হয়ে যেতো। নাম না প্রকাশে বরিশাল বিভাগের একাধিক দলীয় নেতা জানায়, আকন কুদ্দুস দলের বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থাকায় বিভিন্ন কমিটি গঠনে তাকে মাসোহারা দিতে হয়। না দিলে তিনি বাঁধা হয়ে দাড়ান। দলের এই দুর্দিনে দল ও দলের নেতাকর্মীদের ক্ষতি ছাড়া উপকার করেছেন এমন নজির আকন কুদ্দুসের নাই। বরিশাল-১ আসনের অধিকাংশ নেতারা সরকারি দলের এজেন্ট আকন কুদ্দুসকে দল থেকে বহিস্কারেরও দাবী তোলেন।
দলের নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র জানায়, আকন কুদ্দুস কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক। গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি পদ দখল করে করোনা দূর্যোগ কালীন সময়ে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে থাকেন কুদ্দুস। আর সময় অসময় সরকারি দলের ভূমিকায় ভাড়াটিয়া লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আকন কুদ্দুসের এমন প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ড দলকে বিলীন করার অপকৌশল মাত্র। অথচ দলীয় অসহায় নেতাকর্মীসহ এলাকার অসহায় কর্মহীন মানুষের পাশে দাড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন একমাত্র জহির উদ্দিন স্বপন। করোনায় আক্রান্ত মানুষের সেবা দান ও করোনায় মৃত্যু ব্যক্তিদের দাফনের জন্য গ্রামে গ্রামে মোট ১১৭ টি ইমার্জেন্সী রেসপন্স টিম গঠন করে দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছেন বরিশাল-১ আসনের নেতাকর্মীদের হৃদয়ের স্পন্দন জননন্দিত নেতা জহির উদ্দিন স্বপন। যা তিনি এখনও অব্যাহত রেখেছেন।
গৌরনদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য মোঃ জহির সাজ্জাদ হান্নান শরীফ বলেন, মনিরুল ইসলাম দলের পরীক্ষিত যুবদল কর্মী এবং যে অডিও রেকর্ডিং ভাইরাল হয়েছে তা শতভাগ আকন কুদ্দুসুর রহমানের কণ্ঠ। তিনি বলেন, গৌরনদী উপজেলা যুবদলের ১ নং যুগ্ম আহবায়ক গোলাম মোর্শেদ মাসুদের উপরে সন্ত্রাসী হামলা আকন কুদ্দুসের ইশারায়ই হয়েছে। আকন কুদ্দুসের দীর্ঘদিন দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে অসাদাচরন, হামলা-মামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজসহ নানা অপকর্ম সম্পর্কে উপযুক্ত প্রমানাদিসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের কাছে বিচার জানানো হয়েছে। হান্নান শরীফ বলেন, গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কোন সুবিধাভোগী নেতার অসাদাচারন মেনে নেয়া হবে না। যারা রাজপথে থাকে তারা দলের কর্মী হয়েও আকন কুদ্দুসের মতো বিতর্কিত নেতার কথায় কখনোও জাতীয় পার্টি, কখনও আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, এরকম মনগড়া ও অবান্তর কথা এখানকার দলীয় নেতাকর্মীরা কখনও মেনে নেয়নি আর নেবেও না।
বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আকন কুদ্দুস বলেন, ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডিং আমার নয়। আমার কণ্ঠ এডিট করা হয়েছে। তিনি বলেন, মনিরুল ইসলাম বিএনপির কেউ নয়। মনিরুল সম্পর্কে আকন কুদ্দুস বলেন সে এক সময় জাতীয় পার্টি করতো, এখন সে আওয়ামী লীগ করে। দুস্কৃতকারীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া গৌরনদী উপজেলা যুবদলের ১ নং যুগ্ম আহবায়ক গোলাম মোর্শেদ মাসুদ সম্পর্কে বলেন, মাসুদ আমার স্নেহের ছোট ভাই। তার উপর হামলার আমি তীব্র নিন্দা জানাই। মাসুদের উপর যারা হামলা করেছেন তারা তার প্রতিপক্ষ বলে মন্তব্য করেন আকন কুদ্দুসুর রহমান।
Leave a Reply