নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দুর্নীতির বরপুত্র বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জের আলিমাবাদ ইউনিয়নের দেশরতœ শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজটির অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম বাবুল নিয়োগ বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এর (মাউশির) উপ-পরিচালকের বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, হত্যা মামলায় কারাবরণকারী এ অধ্যক্ষের সাথে রয়েছে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা। ২০১৩ সালে মেহেন্দিগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডার মামলায় আসামী ছিলেন তিনি। এছাড়াও বরিশাল নগরীর সদর রোডস্থ একটি সরকারি সম্পত্তি হজম করার জন্য জাল দলিল তৈরী করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এহেন ব্যক্তিকে কিভাবে শেখ হাসিনা নামের কলেজের অধ্যক্ষ করা হয় এ নিয়ে এলাকায় সাধারন মানুষসহ ক্ষমতাসীন দলীয়দের মধ্যেও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
এদিকে একাধিক ভুক্তভোগী জানায়, কলেজটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য সমকাল পত্রিকায় ২০১৫ সালের মে মাসে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৮ অক্টোবর নগরীর সরকারি বরিশাল কলেজে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীসহ ত্রিশ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পদার্থ, গণিত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, হিসাববিজ্ঞান, বাংলা ও ইংরেজীসহ বিষয়গুলোতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত কলেজটি থেকে শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করেছে। অথচ কলেজটির যখন বেতনভাতাদি চালু হয়নি, এককথায় এমপিওভুক্তি হয়নি তখন থেকে এই শিক্ষক কর্মচারীরা কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি দেশরতœ শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয় নামের কলেজটি সরকারি হওয়ার পর মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ করার প্রক্রিয়া শুরু করেন অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম বাবুল। প্রতিষ্ঠাকালীন নিয়োগ বোর্ডের কাগজপত্রাদি লোপাট করে প্রতারণামূলক নতুন নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করে শিক্ষক প্রতি প্রায় দশ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছেন তিনি। অপরদিকে প্রথম নিয়োগকৃতদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলা হচ্ছে যে আপনাদেরকেই নেয়া হবে, যা ঢাহা মিথ্যা।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠালগ্নের নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীরা অভিযোগ করে বলেন, মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে সে বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন জনবল নিয়োগ দেয়ার পায়তারা করছেন। তবে অধ্যক্ষের এহেন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
কলেজ সূত্রে আরও জানা যায়, কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিয়োগ পাওয়া গণিত বিষয়ের শিক্ষক মোঃ মনিরুজ্জামান, কৃষি শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক মুসরাত জাহান, রসায়ন বিষয়ের শিক্ষক শামীমা মুকুল ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক মাকসুদুর রহমানসহ ১৫/১৭ জন শিক্ষক কলেজে যোগদান করেও বিনা বেতনে পাঠদান চালিয়ে গেছেন। কারণ পরবর্তীতে সরকারীকরণ হলে নিয়মিত বেতন পাবেন তারা। কিন্তু এতোদিন কষ্ট করার পরও এখন অধ্যক্ষের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে রসায়ন বিষয়ে নিয়োগ পাওয়া প্রভাষক শামীমা মুকুল বলেন, কলেজটি চলতি বছর সরকারিকরণ করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে কলেজে শিক্ষকতা করলেও আমরা কোন বেতন-ভাতা পায়নি। আর আমরা এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকের শ্মরণাপন্ন হয়েছি। এ নিয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানা আ’লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম ভুলু বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাংসদ ও কলেজের অধ্যক্ষ এবং অভিযোগকারীরা মিটিং করে সমাধান করেছে এর বেশি আমি কিছু জানি না।
সূত্রে আরো জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারী পুরাতন নিয়োগ সুপারিশের কাগজ জাল করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছেন অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন। তিনি ২০১৫ সালে নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ কপিতে নিয়োগ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের কাছে স্বাক্ষর আনতে গিয়েছেন। অথচ এ ব্যাপারে তখনকার নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও সরকারি বরিশাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক খন্দকার অলিউল ইসলাম জানান, ২০১৫ সালে এমপি পংকজ দেবনাথের উপস্থিতিতে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছেন তারা। বর্তমানে কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন প্রথমে নিয়োগপ্রাপ্ত ওই সকল শিক্ষকদের বাদ দেয়ার চেষ্টা করছেন, এতে তাদেরকে মিসগাইড করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, নতুন করে নিয়োগের সুপারিশকৃত তালিকা তৈরী করলেও তাতে তিনি কোনভাবেই স্বাক্ষর করবেন না। অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন তাকে এ সংক্রান্ত একটি তালিকায় স্বাক্ষর করার কথা বললে তিনি বিস্মিত হন। এছাড়া অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন শিক্ষক নিয়োগের কথা না বলে তাকে অধ্যক্ষ নিয়োগের কথা বলে স্বাক্ষর চেয়েছিলেন।
এদিকে, মাউশির উপ-পরিচালক (কলেজ-১, সরকারি কলেজ শাখা) ড. শাহ্ মোঃ আমির আলী তার দফতরে অভিযোগ জমা হয়েছে স্বীকার করে বলেন, অভিযোগে কী উল্লেখ করা হয়েছে তা এখনো দেখা হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষার মূল্যায়ন শিটে অবশ্যই নিয়োগ বোর্ডের সকল সদস্য, বিশেষ করে একজন সরকারি কলেজের শিক্ষক, দফতরের প্রতিনিধি এবং গভর্নিং বডির স্বাক্ষর থাকতে হবে। নতুন করে অধ্যক্ষ যদি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কাউকে নিয়োগের চেষ্টা করেন তা কোনভাবে বৈধ হবে না। তিনি আরও বলেন, তখনকার নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। অভিযোগের পর চলতি মাসের ১৯ সেপ্টেম্বর কলেজ (দেশরতœ শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়) পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
অভিযোগের ব্যাপারে দেশরত্ম শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বাবুল বলেন, কলেজের প্রথম নিয়োগকৃতরাই রয়েছেন এবং যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট অনুমোদিত যে ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের অনুমোদন পায়, তার মধ্যে বরিশাল মেহেন্দীগঞ্জের দেশরতœ শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয় একটি।
Leave a Reply