জানা জটিলতা শেষে করোনা মহামারীর মধ্যে দেশে এসে আটকেপড়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা অবশেষে সৌদি আরব ফেরা শুরু করেছেন। তবে ভিসা নবায়নে সৌদি আরবের কঠিন শর্তে আবারও অনেকের সৌদি যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নতুন এক সিদ্ধান্তে যাদের ভিসার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বরে শেষ হচ্ছে, তাদের ভিসা নবায়নের সুযোগ দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নবায়নের জন্য এমন কিছু শর্ত রাখা হয়েছে, যেটি পূরণ করে একজন বাংলাদেশির সৌদি ফেরা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকার সৌদি দূতাবাস থেকে ভিসা নবায়নে যেসব শর্ত পূরণের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে নিয়োগকর্তা বা কফিলের আবেদনসংবলিত চিঠির কথা বলা হয়েছে, যা সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে। আকামার মেয়াদ লেখা থাকতে হবে সৌদি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের (জাওয়াজাত) আবেদনের প্রিন্ট কপিতে। পাসপোর্ট ও রি-এন্ট্রি ভিসার মূলকপি রাখতে হবে সঙ্গে। থাকতে হবে মেয়াদসহ আকামার মূলকপি। এ ছাড়া সৌদি আরব থেকে বের হওয়ার মূল কপি থাকার বাধ্যবাধকতাও রাখা হয়েছে ভিসা নবায়ন শর্তে।
এর মধ্যেই দেশে এসে আটকেপড়া বাংলাদেশি, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাদের ভিসা নবায়নে আবেদন নেওয়া শুরু করেছে ঢাকার সৌদি দূতাবাস। তবে সরাসরি দূতাবাসে কোনো ভিসার আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না। ভিসা নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে আবেদন গ্রহণের জন্য ৩১ এজেন্সিকে অনুমোদন দিয়েছে দূতাবাস। এসব এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা নবায়নের আবেদন গ্রহণ করতে হবে। তবে ভিসা নবায়ন করতে দূতাবাসকে কোনো অর্থ দিতে হবে না। শুধু প্রসেসিং ফি নিতে পারবে সৌদি দূতাবাসের অনুমোদিত এজেন্সিগুলো।
সৌদি আরব প্রবাসী কুমিল্লার মেহেদী হাসান জানান, তিনি দেশে এসেছিলেন ১০ ফেব্রুয়ারি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফিরতি টিকিট করেছিলেন ১৭ এপ্রিল। এর মধ্যেই করোনার কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আটকে যায় তার সৌদি আরব ফেরা। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে তার ভিসার মেয়াদ। তাই ভিসা নবায়নের জন্য তিনি সৌদি নিয়োগকর্তাকে (কফিল) চিঠির জন্য ফোন করেন। কিন্তু কফিল এ জন্য তার কাছে দাবি করেন দুই হাজার রিয়াল, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়ার শর্ত কীভাবে পূরণ করা হবে সেটি বুঝতে পারছেন না। ফলে এক ধরনের গভীর অনিশ্চিয়তায় পড়েছেন তিনি। সরকারের কাছে অনুরোধ করব বিষয়টি যেন সমাধান করেন। সৌদি ফিরতে না পারলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন করোনা মহামারীর কারণে আটকেপড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেরত যাওয়ার সুবিধার্থে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াতে সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছেন। একই সঙ্গে দাম্মাম রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দিতেও অনুরোধ জানান তিনি। গতকাল রবিবার সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গে ফোনে আলাপকালে ড. মোমেন এ অনুরোধ জানান। এ সময় ড. মোমেন আকামার মেয়াদ বৃদ্ধি ও ভিসা প্রদানে সৌদি আরবের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
রিয়াদ-জেদ্দা-দাম্মাম রুটে বিমানের শিডিউল ঘোষণা
বিমানকে সপ্তাহে ১২টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে সৌদি সরকার। ফলে রিয়াদ ও জেদ্দা রুটের সঙ্গে নতুন রুট হিসেবে দাম্মামেও ফ্লাইটের শিডিউল ঘোষণা করেছে বিমান। শিডিউল অনুযায়ী, জেদ্দাগামী ২২ মার্চ থেকে ২৪ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৩০ সেপ্টেম্বর, ২৫ মার্চ থেকে ২৮ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ১ অক্টোবর, ২৯ মার্চ থেকে ৩১ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৪ অক্টোবর, ১ এপ্রিল থেকে ৪ এপ্রিলের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৫ অক্টোবর, ৫ এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিলের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৬ অক্টোবর। রিয়াদগামী ১৬ মার্চ থেকে ১৯ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ১ অক্টোবর, ২১ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ ফিরতি টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৩ অক্টোবর, ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মার্চের ফিরতি টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৫ অক্টোবর। নতুন রুট দাম্মামগামী ১৬ মার্চ থেকে ১৯ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ১ অক্টোবর, ২১ মার্চ থেকে ২৪ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৩ অক্টোবর, ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীরা ৫ অক্টোবর।
বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক গতকাল রাতে আমাদের সময়কে বলেন, সৌদি এয়ারলাইনসকে আরও দুটি ফ্লাইট বেশি পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিমান সৌদির বিভিন্ন রুটে আরও ১২টি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে।
ওদিকে ফিরতি টিকিটের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সৌদি প্রবাসীরা গতকালও বিমানের মতিঝিল অফিস এবং সৌদি এয়ারলাইনসের সোনারগাঁও অফিসে ভিড় করেন। টিকিটের নিশ্চয়তা না পেলেও বৃষ্টিতে ভিজে টোকেনের আশায় বসে কিংবা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন তাদের অনেকেই। প্রবাসীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও অনেকে টিকিট পাচ্ছেন না। অনেকে ট্রানজিট হয়ে এয়ার অ্যারাবিয়াসহ বিভিন্ন ফ্লাইটে এসেছেন, কোনোভাবেই টিকিটের টোকেন তাদের দিচ্ছে না সৌদি এয়ারলাইনস কিংবা বিমান। তাই টিকিটের নিশ্চয়তা চান তারা।
Leave a Reply