নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে (৩৭) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর ঘটনার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ ছাড়া এই ঘটনায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকেও অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে র্যাব-১১-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের পর আমাদের কাছে খবর আসে, জড়িত কয়েকজন গা ঢাকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন। ওই খবরে র্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। মধ্যরাতে মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা হাইওয়ে এলাকা থেকে এবং ভোরে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
দুপুরে নারায়ণগঞ্জ র্যাব-১১ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। এরপর আসামিদের সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান র্যাব-১১-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম।
এর আগে এই ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গতকাল রোববার বিকেলে আবদুর রহিম (২০) নামের একজনকে এবং রাত ১০টার দিকে রহমত উল্লাহ (৪১) নামের আরেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আবদুর রহিম (২০) একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিদন ভূঁইয়া বাড়ির শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে ও মো. রহমত উল্লাহ (৪১) একই এলাকার মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে।
থানা সূত্র জানায়, নির্যাতনের শিকার ওই নারী গতকাল বেগমগঞ্জ থানায় দুটি মামলা করেন। দুই মামলাতেই ৯জনকে আসামি করা হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এই ঘটনাটি ঘটে।
বেগমগঞ্জের ওসি মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ চৌধুরী বলেন, নির্যাতনের শিকার নারী বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় গতকাল দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে পৃথক দুটি মামলা। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে।
মামলার এজাহারের নারী উল্লেখ করেন, তার স্বামীকে বেঁধে রেখে আসামিরা তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তারা এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। গত এক মাস ধরে তারা এই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা এই ভিডিও ছেড়ে দেন।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন গতকাল বলেন, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই তারা বিষয়টি জানতে পারেন এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেন। নির্যাতনের শিকার নারীকেও উদ্ধার করা হয়েছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ওই নারীর ১৮ বছর আগে বিয়ে হয়। তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় কয়েক বছর আগে তিনি বাপের বাড়ি চলে আসেন। তার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে ওই নারী ছেলে ও এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। সম্প্রতি তার স্বামী তার কাছে আসা-যাওয়া করতে শুরু করেন। এ নিয়ে কয়েকজন যুবক আপত্তি জানিয়ে সেদিন ওই নারীকে নির্যাতন করেন। ঘটনার দিন ওই নারী তার স্বামীর সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনকারীরা তার স্বামীকেও আটক করে নিয়ে যায়। পরে ওই নারীর ভাই ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। ওই নারীর মা নেই। বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ চৌধুরী গতকাল বলেন, এক মাস আগে ওই নারী নির্যাতনের শিকার হলেও তিনি কিংবা তার পরিবারের কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। গতকাল দুপুরে বিষয়টি শোনার পর তিনি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত আবদুর রহিম নামের একজনকে আটক করেন।
Leave a Reply