নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রজনন বৃদ্ধি নিরাপদ রাখতে এবারও ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। আগামী ১৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এ নিষেধাজ্ঞা, যা চলবে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে নদীতে ইলিশ মাছ ধরার সুযোগ করে দিতে প্রশাসনকে ম্যানেজ করার করার কথা বলে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকা। ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রতিদিন নৌকা প্রতি ১ হাজার, মাঝারি ট্রলার ২ হাজার টাকা করে চাঁদা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৌসুমি এই জেলেরা জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার সময় প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় তোলা হবে এ চাঁদা। আর যারা এই চাঁদা দিবেন তারাই নদীতে নির্বিঘেœ মাছ শিকার করার সুযোগ পাবে। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, সন্ধ্যা, সুগন্ধ্যা ও আঁড়িয়াল খা নদী বেষ্টিত বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় একাধিক মাছ শিকার করার স্পষ্ট থাকলেও সন্ধ্যা ও সুগন্ধ্যা নদীর সংযোগ স্থল দক্ষিণ রাকুদিয়ার কমলাপুর নামক স্থান থেকে দোয়ারিকা সেতুর উত্তর অংশ ইলিশ মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত।
নিষেধাজ্ঞার সময় এখানে ইলিশ শিকারে অংশ নিতে দক্ষিণ রাকুদিয়া, দেহেরগতি, রামপট্টি, দোয়ারিকা সেতুর এলাকা, মানিক কাটি, চরসাধুকাঠি, পুরান দোয়ারিকা, উত্তর বাহেরচর এলাকা, রাহুতকাঠি, পুরাতন শিকারপুর স্পষ্টে মাছ শিকার করার জন্য কমপক্ষে ৭০ টি ডিঙি নৌকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। নদী সংলগ্ন এলাকায় এলাকায় চলছে নৌকা মেরামত ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল বাধার কাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত বছর টাকার বিনিময়ে পুলিশ কে ম্যানেজ করে নির্বিঘেœ মাছ শিকার করার সুযোগ করে দিয়েছিল এলাকার একটি চক্র। এ বছরও মাছ শিকার করার সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে চাঁদা তোলার প্রক্রিয়া চলছে ।
জেলেরা সরকারি সহায়তা ২০ কেজি করে চাল পাবার পরেও বাড়তি সুবিধা নিতে ইলিশ শিকার কে যেন উৎসবে পরিনত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে এ ব্যাপারে বাবুগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান দৈনিক আজকের বার্তা কে বলেছেন, এ বছর মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে অভিযানে থাকবেন কঠোর নিরাপত্তা । প্রশাসনের সব সংস্থাকে ইলিশ রক্ষায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে মনিটরিং টিম, কন্ট্রোল রুম করা হচ্ছে। মৎস্যজীবী, ট্রলার মালিক ও জেলেদের সতর্ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় বৃহৎ যে কর্মযজ্ঞ হবে তা বাস্তবায়নে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বরিশাল মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস জানান, পূর্ণিমার ওপর ভিত্তি করে তারা নিষেধাজ্ঞা শুরুর সুপারিশ পাঠিয়েছেন মন্ত্রাণালয়ে। সে অনুযায়ী মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে এবারও ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তিনি বলেন, ইলিশ এখন সারা বছরই ডিম ছাড়ে। তবে ৮০ শতাংশ ইলিশ ডিম ছাড়ে আশ্বিনের পূর্ণিমা ও অমাবশ্যায়। এ সময়ে ডিম ছাড়ার জন্য মা ইলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে সাগর ছেড়ে নদীতে চলে আসে। মা ইলিশের নদীতে এসে প্রজনন নিরাপদ করতে প্রতি বছর আশ্বিনের পূর্ণিমা ও অমাবশ্যা মাঝে রেখে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পূর্ণিমার হিসাব অনুযায়ীই সরকার এবারও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে।
Leave a Reply