নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় চার শিশু আসামিকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার রাতে হাইকোর্টের এক আদেশের পর শুক্রবার (৯ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে ওই চার শিশুকে তাদের অভিভাবকের হাতে তুলে দেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের বুকে টেনে নিয়ে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
স্বজনদের হাতে ওই ৪ শিশুকে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাধবী রায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ, বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালামসহ প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তারা।
এরআগে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে বরিশালের শিশু আদালত ওই ৪ শিশুকে জামিন দেন। এরপর রাতেই বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালককে তাদের মুক্তির জন্য ই-মেইলে বার্তা পাঠান। উচ্চ আদালতের এই আদেশ অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরিশালের বিচারক চার শিশুকে জামিন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান। এদিকে আগামী ১১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে ওই চার শিশু ও তাদের অভিভাবকসহ বাকেরগঞ্জ থানার ওসিকে স্বশরীরে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহকে ওইদিন হাইকোর্টে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ধর্ষণের শিকার শিশুর মেডিকেল প্রতিবেদন ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে পাঠাতে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের এই আদেশ বৃহস্পতিবার রাতেই টেলিফোনে বরিশালের শিশু আদালতের বিচারক, জেলা প্রশাসক, বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সংশ্লিষ্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ এবং বাকেরগঞ্জ থানার ওসিকে অবহিত করা হয়। এরপর বরিশালের সংশ্লিষ্টরা শিশু চারটির জামিন ও তাদের যশোর থেকে বরিশালে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
প্রসঙ্গত, ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুকে আসামি করে গত ৬ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এ মামলায় ওইদিনই চার শিশুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পরদিন ৭ অক্টোবর বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ এক আদেশে ওই চার শিশুকে যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর তাদের যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। এই সংবাদ বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আসে। এরপর রাতেই বিচারপতিদ্বয় নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করে ভার্চুয়াল আদালত বসান।
Leave a Reply