কলাপাড়া প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীর পর্যটন শহর খ্যাত কলাপাড়া, মহিপুর ও কুয়াকাটায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গত কয়েকদিনের বিশেষ অভিযানে এক ইউপি সদস্য সহ অর্ধশতাধিক মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতা গ্রেফতার হলেও ধরা পড়েনি মূল হোতারা। দৃশ্যমান কোন উপার্জন ছাড়াই মাদক কানেকশনে কোটিপতি বনে যাওয়া মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রনকারী এসব প্রভাবশালীরা প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে কলাপাড়া, কুয়াকাটা, মহিপুর মৎস্যবন্দর সহ গ্রামীন জনপদে প্রতিনিয়ত চালান করছে সর্বনাশা ইয়াবা, গাঁজা, চোলাই মদ। মাদকের ভয়াল আগ্রাসন স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অভিভাবকরা। মাদকের অর্থ সংগ্রহে বাড়ছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি সহ অপরাধ প্রবনতা। পুলিশ, র্যাব ও মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের হাতে বেশ কয়েকটি বড় চালান ধরা পড়ার পরও তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফেলতিতে জানা যায়নি গড ফাদারদের নাম। জানা যায়, কলাপাড়া ও মহিপুর থানায় মাদকের কয়েকশ’ মামলা তদন্তাধীন থাকার পরও এর উৎস, সরবরাহ ও বিপনন প্রক্রিয়া নিয়ে পুলিশ-র্যাব রয়েছে অন্ধকারে। কলাপাড়া পৌরশহরে ও আলীপুর মৎস্যবন্দরে ডিবি ও থানা পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমান ইয়াবা সহ চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার বেশ কয়েকজন ধরা পড়লেও আইওয়াশ মূলক তদন্তের কারনে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে শধুমাত্র চুনোপুটিরাই থাকছে, অধরা থেকে যাচ্ছে রাঘব বোয়ালরা। এরপর জামিনে বেরিয়ে ফের গডফাদারদের নিয়ন্ত্রনে সক্রিয় হচ্ছে তারা। মাদক বিরোধী অভিযানে নিয়ন্ত্রক গডফাদাররা বরাবরের মত ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় মাদকের ভয়াল আগ্রাসন রোধ করা যাচ্ছেনা। মাদকের দ্রুত বিস্তার রোধে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন। অথচ সমুদ্র পথে কয়েকজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের মাছ ধরার ট্রলারে চট্রগ্রাম, কক্সবাজার সহ মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্তবর্তী সমুদ্র জলসীমা থেকে প্রতিনিয়ত আসছে ইয়াবা, পাচার হচ্ছে ইলিশ। কলাপাড়া ও আলীপুর মৎস্য বন্দর থেকে ইয়াবার বড় চালান সহ কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর ইয়াবার বিকিকিনি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এলেও তদন্তের স্বার্থে গনমাধ্যম কর্মীদের কিছুই বলছেনা পুলিশ, এরপর রহস্যজনক কারনে তদন্ত প্রতিবেদনেও আসছেনা বাড়তি কিছু, চুনোপুটি বিক্রেতাদের হাল হকিকত ছাড়া। ইয়াবা কানেকশনে গ্রেফতারকৃত কয়েক নারীর দেয়া তথ্যমতে ইয়াবা পাচারের হোতা চিটাগং ও কক্সবাজারের বেশ কিছু ট্রলার মাঝি, যারা প্রভাবশালীদের মাছ ধরা ট্রলার এর মাঝি হওয়ার সুবাদে ধরা পড়ছেনা কোন অভিযানে। মাদক কানেকশনে থাকা এ চক্রটি শেল্টারদাতা প্রভাবশালীদের সহায়তায় মৎস্যবন্দর, সমুদ্র উপকূলে স্থায়ী ভাবে বসতি গড়ে তুলে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়ে সমুদ্র পথে ইয়াবার চালান এনে পূন:রায় সড়ক ও নৌপথে ছড়িয়ে দিচ্ছে এ জনপদে। ইয়াবা বিক্রীতে উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরী সহ গৃহবধূরাও জড়িয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত, আদালতে সোপর্দ হওয়া মাদক মামলার আসামীর সংখ্যা ক্রমশ: বাড়লেও বন্ধ করা যাচ্ছে না ইয়াবা, গাঁজা। স্থানীয় এসব মাদক ব্যবসায়ী কিংবা বিক্রেতাদের সঙ্গে উখিয়া, টেকনাফের মাদক ব্যবসায়ীদের রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। সম্প্রতি কলাপাড়া পৌরশহরের মুসলিমপাড়া মহল্লায় গোয়েন্দা ও কলাপাড়া থানা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ফিরোজ হাওলাদার নামে ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে, ২৩০৪ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়। ফিরোজের সহযোগী মোহাম্মদ আলী, আপেল বড়–য়া, দিলদার মিয়াও গ্রেফতার হয়। যাদের বাড়ি কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে। পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার হাতে এ পর্যন্ত আটক হওয়া নারী মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে আলীপুরের ইয়াবা স¤্রাজ্ঞী ফাতেমা, পৌরশহর রহমতপুরের রিয়ামনি, মিঠাগঞ্জের রোজিনা বেগম, পৌর শহরের মিষ্টি, সীমা, লিজা, মহিপুরের জেলেবধূ লায়লা ও জ্যোৎ¯œা সহ শতাধিক নারী অধিক উপার্জনের আশায় প্রতিনিয়ত জড়িয়ে পড়ছে মাদক কানেকশনে। সূত্রটি আরও জানায়, বেশ কিছু বহিরাগত স্থানীয় গডফাদারদের শেল্টারে কলাপাড়ায় ইয়াবার ব্যবসা করে আসছে। ইয়াবা আসক্ত হয়ে পর্নোগ্রাফী, অসামাজিক কর্মকান্ড সহ নিজের পুরুষাঙ্গ নিজেই কেটে ফেলার ঘটনাও ঘটছে। কলাপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার হাবিবুল্লাহ রানা জানান, শহর ও গ্রামে মহিলারা ঘরে ঘরে গাঁজা বিক্রি করছে। কলাপাড়া থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং মহিপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যে কোন মূল্যে মাদক ব্যবসা বন্ধ করার বিষয়ে আশার কথা শোনালেন এ দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
Leave a Reply