বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ বাবুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ঝোঁপঝাড়ে, চরের জঙ্গলে, কলা বাগানে আর কচুরিপানার মধ্যে গোপনে ইলিশ বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে সন্ধ্যা, সুগন্ধা ও আড়িয়াল খাঁ নদীতে মা ইলিশ শিকার করছেন অসাধু জেলেরা। ইলিশ ধরা ও বিক্রি ঠেকাতে এ ৩ নদীতে অভিযানও চলছে। তবুও নতুন কৌশলে নৌকাগুলোতে কোনো বাতি ব্যবহার না করে রাতে চলছে মা ইলিশ শিকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ২০টি গ্রুপ উপজেলার বিভিন্ন স্পষ্ট এলাকায় মা ইলিশ ধরে বিক্রি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে বলেন, ‘এই মৌসুমে দিনে কড়াকড়ি থাকায় লোকচক্ষু আড়াল করতে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ইলিশ ধরা হয়। সেই মাছ নৌকা থেকে নামিয়ে নদী তীরের ঝোপ-জঙ্গলে, কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। সুযোগ পেলে কিছু বাড়িতে মজুদ করা হয়। আর মুঠোফোনের মাধ্যমে ক্রেতাকে ডেকে নিয়ে তা বিক্রি করা হয়।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি নৌকার খন্দ (নৌকার মাছ সংরক্ষণ করার স্থান ) থেকে দু’তিন জন জেলে শিকার করা ইলিশ মাছ বের করে দিচ্ছেন। অন্য জেলেরা ছোট ও বড় ইলিশ পৃথক করে ঝুড়িতে তুলে দিচ্ছেন। সেই মাছ গোপন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। এক মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, ৫শ’ থেকে ৬শ’ গ্রামের প্রতি কেজি ইলিশ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রামের প্রতি কেজি ইলিশ ৪৫০ টাকা এবং কেজি সাইজের ইলিশ ৫ শ’ থেকে সাড়ে ৫ শ’ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা জানান, নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে সস্তায় কিনে ইলিশের স্বাদ নিচ্ছেন অনেকই। তবে সারা বছর কম দামে ইলিশ খেতে চান। তাই শক্তহাতে অসাধু জেলেদের প্রতিরোধের দাবি তাদের। সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে বাবুগঞ্জ উপজেলার সন্ধ্যা, সুগন্ধা, আড়িয়াল খাঁ নদীতে প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযান চলছে। গত সোমবার পর্যন্ত অভিযানে ১৩ জেলেকে আটক করে জেল-জরিমানা করা হয়। জব্দ করে নষ্ট করা হয়েছে প্রায় চার লাখ মিটার কারেন্ট জাল। তবে এতেও থেমে নেই ইলিশ নিধন। বাবুগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান জানান, মা ইলিশ রক্ষায় ১৪ অক্টোবর থেকে বাবুগঞ্জ উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীর কামাড়পাড়া থেকে ছানিদেকারপুর, সন্ধ্যা নদীর মোল¬ারহাট পয়েন্টে, সুগন্ধ্যা নদীর ক্ষুদ্রকাঠী থেকে দেহেরগতি ইউনিয়নের চর মালেঙ্গা এলাকা পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫টি অভিযান চালানো হয়। স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য কার্যালয় ও পুলিশ এ অভিযান পরিচালনা করে। গত এক সপ্তাহের অভিযানে এসব এলাকা থেকে ১৩ জেলেকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা করা হয়। অভিযানে জব্দ করা হয় প্রায় চার লাখ মিটার কারেন্ট জাল। এ সময় প্রায় ২০০ কেজি ইলিশ উদ্ধার করে বিভিন্ন এতিমখানায় প্রদান করা হয়। তিনি আরো বলেন, বাবুগঞ্জ উপজেলায় জেলের সংখ্যা এক হাজার ৯৩৮ জন। এসব জেলের প্রত্যেককে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। তবু তাঁরা নদীতে অবৈধভাবে জাল ফেলছেন। তবে আমাদের অভিযান সফল করতে সব ধরনের কার্যক্রম ও প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি অভিযান চালানো হচ্ছে।
Leave a Reply