দেখতে দেখতে ঘনিয়ে আসছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে তুমুল আগ্রহ। মার্কিন নির্বাচন বাংলাদেশের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে, সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে জার্মানিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন হলেও দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে সাধারণত তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না। তবে এবারের নির্বাচনের পর দেশটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক। তার মতে, যদি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন নির্বাচিত হলে দেশটির চীন-ভারত বিষয়ক সমীকরণে পরিবর্তন আসতে পারে। আর এর প্রভাব বাংলাদেশের ওপরেও পড়তে পারে।
তিনি বলেন, ‘আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো ক্ষমতায় আসলে মুসলিম বিশ্ব নিয়ে তার অবস্থানের পরিবর্তন ঘটতে পারে। সেটিও বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে।’
শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান উদ্বেগ হলো তৈরি পোশাক রপ্তানি। ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় আসলে এ খাতে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ৷হিলারি ক্লিন্টন এখনো দলের রাজনীতিতে বড় প্রভাব রাখেন৷ আর তাই, জো বাইডেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলে হিলারির নীতিও প্রতিফলিত হবে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মূল জায়গাগুলো হলো:
১. করোনাভাইরাসের টিকা
২. শিক্ষার্থী ভিসা
৩. বৈধ অভিবাসন
৪. জিএসপি সুবিধা
৫. রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
৬. বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান
এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক জোট।যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ছে৷ গত মাসে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগানের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট হয়েছে। এ সফরে বিগান জানান, তারা রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান। এই ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবেন বলেও জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের মাধ্যমেকূটনৈতিক সম্পর্ক বিস্তৃতির নীতি অনুসরণ করে আসছিল৷ তাতে পরিবর্তন আসছে। তিনি বলেন, ‘কারণ ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশি দেশগুলোর সম্পর্ক বেশ খারাপ৷ আর তাদের রাজনীতিতে হিন্দুত্ববাদের প্রভাবকে যুক্তরাষ্ট্র ভালো চোখে দেখছে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী।’
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বাড়ানোর কারণ হিসেবে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মূল বিষয় হলো অর্থনীতি৷ করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে৷ এটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে যারাই ক্ষমতায় আসুক তাদের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরও বাড়বে।’
যুক্তরাষ্ট্রে কারা ক্ষমতায় এলো তার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়ে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে যা হচ্ছিল তাই হবে৷ আর বাইডেন আসলে ট্রাম্পের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয়েছে,বিশেষ করে অর্থনীতি এবং ভাবমূর্তির তা কাটিয়ে উঠতেই ব্যস্ত থাকতে হবে।ফলে বহির্বিশ্ব নিয়ে ভাবার তেমন একটা সময় তাদের থাকবে না।’
তার মতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সহনশীলতায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখন অনেক পিছিয়ে গেছে।তাই অন্য দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে তারা ভবিষ্যতে কবে, কতটুকু কথা বলতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন,‘আমাদের (বাংলাদেশকে) শুধু মাথা ঠান্ডা রেখে উন্নয়নটা ধরে রাখতে হবে।’
এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘বাইডেন ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বায়ন নিয়ে ভাববে। তবে সেটা সময় নিয়ে। তার সেই ভাবনায় বাংলাদেশ লাভবানই হবে।’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশেই থাকবে বলে মনে করেন এ দুই বিশেষজ্ঞ।আর অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বাজারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়বে।বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে এরইমধ্যে দু’দেশের আলোচনা শুরু হয়েছে৷ এদিকে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের একটি প্রভাব বাংলাদেশের উপরে রয়েছে।
Leave a Reply