বিদেশীদের জন্য ওমরাহ পালন উন্মুক্ত করেছে সৌদি সরকার। স্বাস্থ্যবিধি ও কঠোর নীতিমালা মেনে গতকাল থেকে ওমরায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন বিদেশীরা। ওমরাহ চালুর তৃতীয় ধাপে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে ওমরাহ পালনে এখনো কোনো নির্দেশনা পায়নি বাংলাদেশ।
মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সৌদি সরকার ওমরাহ পালন বন্ধ ঘোষণা করে। এর পর থেকে সাত মাস ওমরা পালন বন্ধ ছিল। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই গত ৩০ জুলাই শুধু ১০ হাজার সৌদির অধিবাসীকে পবিত্র হজ করার সুযোগ দেয়া হয়। এরপরও ওমরাহ পালন বন্ধ থাকে। সম্প্রতি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গত ৪ অক্টোবর থেকে সীমিত পরিসরে আবার ওমরাহ করার জন্য পবিত্র কাবাঘর উন্মুক্ত করে সৌদি সরকার। পর্যায়ক্রমে চারটি ধাপে ওমরাহ পালনের সুযোগ দেয়া হয়। প্রথম ধাপে গত ৪ অক্টোবর থেকে সৌদি নাগরিকদের জন্য ওমরা পালনের সুযোগ দেয়া হয়। তবে মোট ধারণক্ষমতার মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ ওমরা করার সুযোগ পান। দ্বিতীয় ধাপে ১৮ অক্টোবর থেকে ওমরাহকারীর সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়। গ্র্যান্ড মসজিদের ধারণক্ষমতার ৭৫ শতাংশ খুলে দেয়া হয়। এতে প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তি ওমরায় অংশ নিতে পারছেন। তৃতীয় ধাপে ১ নভেম্বর থেকে বিদেশীর জন্য ওমরাহ করার সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে একেকবারে ২০ হাজার ব্যক্তি ওমরা করতে পারছেন। এতে দিনে মোট ৬০ হাজার মানুষ ওমরা করার সুযোগ পাচ্ছেন। চতুর্থ ধাপে যখন করোনাভাইরাসের ঝুঁকি আর থাকবে না, তখন গ্র্যান্ড মসজিদের কর্মকাণ্ড পুনরায় স্বাভাবিকভাবে চলবে।
জানা যায়, গতকাল থেকে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহারাইন, কুয়েত, লেবানন, ওমান, সুদান, তিউনিসিয়া, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দেশ ওমরাহ কার্যক্রম শুরু করেছে। মসজিদুল হারাম ও মসজিদ নববী পরিচালনা পরিষদের মুখপাত্র হানি হায়দার জানিয়েছেন, জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগ তৃতীয় ধাপে ওমরাহযাত্রী ও মুসল্লিদের অংশগ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বিদেশীদের ওমরাহ পালনের বেশ কিছু নির্দেশনা প্রকাশ করেছে সৌদি সরকার।
বিশেষ নির্দেশনাগুলো হলো : এক. ওমরাহ পালনে মক্কায় যাওয়ার আগে কোনো নিবন্ধিত ওমরাহ কোম্পানি বা ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ওমরার আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। দুই. করোনাকালে ওমরাহ পালনের জন্য কেবল ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সের লোক ওমরাহ পালনের সুযোগ পাবে। তিন. ওমরাহ যাত্রীদের পিসিআর পরীক্ষায় সম্পন্ন করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। নিজ দেশের নির্ভরযোগ্য কোনো ল্যাব থেকে দেশ ত্যাগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা সম্পন্ন করতে হবে। চার. সৌদি আরব পৌঁছে সব ওমরাহযাত্রীকে হোটেলে তিন দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এবং পাঁচ. ওমরাহ পালনকারীর পাসপোর্টের সব তথ্যের সত্যতার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওমরাহ কোম্পানিকে দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। ওমরাহ যাত্রীর বিমান টিকিট ও আবাসনের তথ্যসহ সব তথ্য সৌদিতে পৌঁছার ২৪ ঘণ্টা আগে প্রদান করতে হবে।
বাংলাদেশ এখনো নির্দেশনা পায়নি : জানা যায়, বিদেশীদের জন্য পবিত্র কাবা ঘর খুলে দেয়া হলেও বাংলাদেশ এ ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা পায়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন নয়া দিগন্তকে বলেন, এ ব্যাপারে সৌদি সরকার থেকে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছুই জানায়নি।
বাংলাদেশ হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম নয়া দিগন্তকে বলেন, এ ব্যাপারে আমরা সরকারিভাবে এখনো কোনো নির্দেশনা পায়নি। এ দিকে গতকাল রোববার হাবের পক্ষ থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। হাবের মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়, ইতোমধ্যে মিসর, পাকিস্তানসহ অনেক দেশ ওমরাহ কার্যক্রম শুরু করেছে। বাংলাদেশ থেকেও শিগগিরই ওমরাহ কার্যক্রম শুরু করার জন্য সৌদির ওমরাহ এজেন্সিগুলো প্রক্রিয়া শুরু করার তাগিদ দিচ্ছে। এজন্য ওমরাহ লাইসেন্সের বৈধতা তালিকা প্রকাশ করা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার জন্য হাবের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের প্রতি অুনরোধ জানানো হয়।
হাবের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা আশা করছি আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ যাত্রী যাওয়া শুরু হতে পারে। এজন্য হজের পর নতুন বছর শুরু হওয়ায় ওমরাহ লাইসেন্স নবায়নসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজ রয়েছে। সে ব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
Leave a Reply