হোয়াইট হাউজের পর এবার পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপারকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরখাস্ত করার পর পেন্টাগনের নেতৃত্বে কাঁপন ধরেছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের মধ্যে শীর্ষ নীতিনির্ধারক জেমস অ্যান্ডারসন, মার্ক এসপারের চিফ অব স্টাফ জেন স্টেওয়ার্ট পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগপত্র দাখিল করেছেন। তাদের পদত্যাগ তৎক্ষণাৎ কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্য হিলের প্রকাশিত খবরে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, সিআইএ পরিচালকের পদ থেকে জিনা হাসপেলকে ট্রাম্প বরখাস্ত করতে পারেন- এমন গুঞ্জনের মধ্যে রিপাবলিকান সিনেটররা তাকে পদে রাখার পক্ষে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
পেন্টাগনের শীর্ষ এসব কর্মকর্তার পদত্যাগপত্র দাখিল করার পর ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ড. অ্যান্ডারসন, জেন স্টেওয়ার্টকে জাতির প্রতি ও প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতি তাদের অবদানের জন্য আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। নিজেদের ক্যারিয়ারজুড়ে তারা জাতীয় প্রতিরক্ষা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভবিষ্যতের জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। পরবর্তী পদক্ষেপে তারা সফল হবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’
এতগুলো কর্মকর্তার পদত্যাগের পর ট্রাম্প প্রশাসন অনুগতদের দিয়ে দ্রুত এসব পদ পূরণের উদ্যোগ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস ছাড়ার মাত্র ৭০ দিনে যাতে বিতর্কিত নির্বাহী অ্যাকশন নেওয়া যায়।
প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্তের মাত্র একদিনের মাথায় তিন কর্মকর্তার পদত্যাগের বিষয়ে প্রতিনিধি পরিষদে সশস্ত্র সেবা কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম স্মিথ বলেছেন, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়কালে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবস্থান বদল কত মারাত্মক একটি বিষয়। এসব পদত্যাগ এমন একটি প্রক্রিয়ার শুরু যাতে প্রত্যেক আমেরিকানের আতঙ্কিত হওয়া উচিত।
স্মিথ আরও বলেন, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প ও তার অনুগতরা বিভক্তি ও বিশৃঙ্খলার বীজ বপণ করেছেন। এটি এখন পেন্টাগনে এসে পৌঁছেছে।
অ্যান্ডারসনের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ট্রাম্প অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অ্যান্থোনি টাটার নাম প্রস্তাব করেছেন। এ কারণেও উদ্বিগ্ন স্মিথ। তিনি বলেন, এই গ্রীষ্মকালে পেন্টাগনের শীর্ষ পলিসি কর্তা হিসেবে ফক্স নিউজের কমেন্টেটর টাটার নাম প্রস্তাব করেন ট্রাম্প। কিন্তু তখন ইসলাম নিয়ে তার বিতর্কিত মন্তব্য সামনে আসায় নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন তিনি। টাটা বারাক ওবামাকে সন্ত্রাসী নেতা ও ইসলামকে তার জানা সবচেয়ে সহিংস ধর্ম বলে টুইট করেছিলেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ তদন্ত সংক্রান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিআইএ পরিচালক জিনা গাসপেল। এ কারণে হতাশা থেকে ট্রাম্প তাকে বরখাস্ত করতে পারেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। হাসপেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুঞ্জন ওঠার কারণ হচ্ছে বরখাস্ত করা প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার নির্বাচনপূর্ব ঘটনাবলী নিয়ে কথা বলতে পারেন। এতে করে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। তাই সিআইএ পরিচালককে সরিয়ে দেওয়া উত্তম মনে করতে পারেন ট্রাম্প। তবে শীর্ষ রিপাবলিকান সিনেটররা বলছেন, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ছাড়া সিআইএ পরিচালককে বরখাস্তের মতো অন্য কোনো কারণ তারা দেখছেন না।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পিছিয়ে পড়ার ইঙ্গিতে হোয়াইট হাউস ছাড়ার হিড়িক পড়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের। তারা আর সেখানে থাকতে চাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে হোয়াইট হাউস ছেড়েছে অনেকেই। এমনকি ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচার শিবিরের কয়েকজন কর্মকর্তাও তার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।
প্রতিবেদনে বলা হযেছে, বর্তমানে ভোটের যে অবস্থা, তাতে পেনসিলভানিয়া ও জর্জিয়ায় ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউসের কিছু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও নির্বাচনি প্রচার শিবিরের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে এরই মধ্যে প্রেসিডেন্টের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ট্রাম্পের আর আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু নেই বলে জানিয়েছেন তার একজন উপদেষ্টা। সিএনএন-কে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি ছিল এক ধরনের মিথ্যাচার। ওই ঘটনার পর হোয়াইট হাউজের অনেক কর্মকর্তা তাদের বিভাগীয় প্রধানদের কাছে ট্রাম্পের পরবর্তী করণীয় নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের পরবর্তী করণীয় হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই উপদেষ্টা বলেন, ‘সেটা ঈশ্বর ভালো জানেন।’
এদিকে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের পরামর্শক ম্যাট মরগান বলেছেন, এই নির্বাচন এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘চার রাজ্যের ফলের ভিত্তিতে জো বাইডেনের জয়ের যে ভুয়া আভাস দেওয়া হচ্ছে তা বাস্তবতা থেকে বহু দূরে।’
Leave a Reply