নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রায় ১ যুগ পর আবার অতিথি পাখি এসেছে বরিশালের আড়াই’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দিঘিতে। শীতকালীন অতিথি পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত দুর্গাসাগর। চারিদিকে সবুজে ঘেরা এই দিঘি দেখতে আসা দর্শনার্থীরাও। মুগ্ধ অতিথি পাখির বিচরণে। তারা দিঘিকে আরও পাখি বান্ধব করার দাবি জানিয়েছেন। স্থায়ী বিচরণের জন্য দুর্গা সাগরে পাখি বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দুর্গা সাগরকে অতিথি পাখির অভয়াশ্রম করার নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
বরিশাল জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে মাধবপাশা এলাকাটি জনসাধারণের কাছে অতি পরিচিত আড়াই’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দিঘির কারণে। আর দুর্গা সাগরের অতীত ঐহিত্য শীতকালীন পাখি। প্রতি বছর শীত মৌসুমের শুরুতে শীত প্রধান বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পাখি আসে এই দিঘিতে বিচরণের জন্য। কিন্তু স্থানীয়দের নানা উৎপাত আর সাগর তীরের গাছপালা নিধনসহ নানাভাবে পরিবেশ বিনষ্টের কারণে হুমকিতে পড়ে অতিথি পাখির বিচরণ। ২০০৭ সালে সিডর পরবর্তী উদ্ধার এবং ত্রাণ তৎপরতার জন্য দিনরাত দেশি-বিদেশি বিমান আর হেলিকপ্টারের ওঠানামার শব্দ দূষণে হারিয়ে যায় অতিথি পাখি। এরপর থেকে গত প্রায় ১ যুগেও দুর্গা সাগরে দেখা যায়নি শীতকালীন পাখি। কিন্তু সাগর তীরের গাছ-গাছালীতে পাখি বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিসহ দিঘির দক্ষিণপাশে পদ্ম আর শাপলা সৃজন করায় ১২ বছর পর এবার আবার ফিরে এসেছে অতিথি পাখি। পদ্ম আর শাপলার মধ্যে বসে চোখের আড়াল হয়ে যায় পাখিগুলো। তারা সেখানে বিভিন্ন পোকামাকর এবং মাছ খায়। দিনরাত তাদের কলকাকলিতে দিঘি এলাকায় ১২ বছর পর আবার সৃষ্টি হয়েছে এক ছন্দময় পরিবেশ। এতে মুদ্ধ-বিমোহীত দর্শনার্থীরা। তারা দুর্গা সাগরকে আরও পাখি বান্ধব করার দাবি জানিয়েছেন। বরিশাল বিএম কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পাখি বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কারণে দীর্ঘ ১ যুগ পর আবার অতিথি পাখি এসেছে দুর্গা সাগরে। শীতের প্রকোপ বাড়লে অতিথি পাখির বিচরণ আরও বাড়বে আশা করেন তিনি। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ১ যুগ পর ফিরে আসা পাখির অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। অতিথি পাখি ছাড়াও দুর্গা সাগরকে দেশি প্রজাতীর পাখির অভয়াশ্রম করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শীতের পাখিসহ দুর্গা সাগরের নৈসর্গিক পরিবেশ উপভোগের জন্য দর্শনার্থীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। ১৭৮০ সালে তৎকালীন রাজা কনদভ্য তার স্ত্রী দূর্গা দেবীর নামকরণে জনগণের পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সাড়ে ৪৫ একর জমির উপর এই দিঘি খনন করেন। ১৯৪ বছর পর ১৯৭৪ সালে তৎকালীন মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের উদ্যোগে মৃত প্রায় দিঘি পুনরায় খনন করা হয়।
Leave a Reply