দখিনের খবর ডেক্স ॥ মানহানির অভিযোগে ঢাকার আদালতে চলমান দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, মওদুদ আহমদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ঢাকার এ দুই মামলায় বিচারিক আদালতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট (হাজিরা পরোয়ানা) জারিপূর্বক খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিষয়ে গত ৩১ মে একটি রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বিচারিক আদালতে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। গত ৬ জুন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। পরে গত ১০ জুন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত স্থগিত না করে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। গতকাল সোমবার আপিল বিভাগ শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন। খালেদার আবেদনের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী অন্য মামলায় জেলহাজতে থাকলে আসামি গ্রেপ্তার দেখানোর দায়িত্ব প্রসিকিউশনের বা বাদীপক্ষের। আসামিপক্ষের এ পর্যায়ে এ ধরনের দরখাস্ত দেওয়ার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। তাই ওই পক্ষ কর্তৃক দাখিলি দরখাস্ত নথিজাত করা হলো। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এই আদেশের বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ম্যাজিস্ট্রেট এ বিষয়ে প্রক্রিয়াগত দিক থেকে ভুল পথে অগ্রসর হয়েছেন। নালিশি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন আবেদন করেন। তিনি আদালতকে অবহিত করেন, অন্য মামলায় তিনি কারাগারে আছেন। এ অবস্থায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল হয়েছে কি না, সেই প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য অপেক্ষার দরকার নেই। তাই প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করার মধ্য দিয়ে জামিন আবেদন নথিজাত করে ম্যাজিস্ট্রেট গুরুতর ভুল করেছেন। হাইকোর্টের রায়ে আরো বলা হয়, ম্যাজিস্ট্রেট জামিন আবেদন নিষ্পত্তিতে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব করেছেন, যা বিচারিক প্রক্রিয়ার অপব্যবহার। একই সঙ্গে নথিজাত করে আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশও দেন হাইকোর্ট। জাতীয় পতাকা অবমাননার মামলা : যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়ে সমগ্র জাতির মানহানির অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৭-এ মানহানির মামলা করেন বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। এ মামলায় ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়া জামিন চাইলে গত ১৭ মে তৃতীয় দফায় শুনানি পিছিয়ে আগামি ৫ জুলাই আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন। এ অবস্থায় তাঁর জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগ : মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২২-এ মামলাটি করেন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর গত ২৫ এপ্রিল এ মামলায় খালেদা জিয়া জামিন চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু জামিন না দিয়ে ১৭ মে শুনানির দিন নির্ধারণ করেন আদালত। পরে ওই তারিখে তাঁর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের আদেশ দিয়ে ৫ জুলাই জামিন বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেন। এ অবস্থায় তাঁর জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছিল।
Leave a Reply