রাহাদ সুমন ॥ বানারীপাড়ায় শিক্ষার্থীদের ফ্রি পাঠদান করে বাইশারী হেল্প ফর ফ্রেন্ডস নামের একটি সংগঠন অনন্য ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। “বন্ধু ……… বোঝে আমাকে বন্ধু….. আছে আর কি লাগে”। শিল্পী তপুর গাওয়া এই গানটিই যেন বরিশালের বানারীপাড়ার বাইশারীর “হেল্প ফর ফ্রেন্ডস” সংগঠনরে মূলমন্ত্র । মানুষ বন্ধুর দ্বারা প্রভাবিত হয় এই ধারণা থেকেই মেধাবী তরুন সাংবাদিক মো. রাজু লস্কর “হেল্প ফর ফ্রেন্ডস” সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করে । এখানে প্রতি শুক্রবার ও সকল বন্ধের দিন সকালে ও বিকালে ফ্রি পাঠ বুঝতে সহায়তা ক্লাস করানো হয়। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেনি পর্যন্ত যারা মেধার দিক দিয়ে দুর্বল ও যারা অর্থের অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারে না এবং যে কোন শিক্ষার্থী এখানে ফ্রি ক্লাস করতে পারে। যে শ্রেনির শিক্ষার্থীকে ঐ শ্রেণির শিক্ষার্থী অথবা, উপরের শ্রেণির মেধাবী অর্থাৎ অ+, অ গ্রেড প্রাপ্ত শিক্ষার্থী দ্বারা ক্লাস করানো অথবা গ্রুপ ষ্টাডি করানোই এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য। অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসার অনন্য উদাহরণ “হেল্প ফর ফ্রেন্ডস”। এখানে নেই কোন হিংসা, বিদ্বেষ অথবা না পাওয়ার ব্যর্থ রেস। সত্যিকারের স্বপ্ন রাজ্যে এখানে সবাই রাজা। বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট রেখে মেধাকে আরো শানিত করার স্বচ্ছ রাস্তা এটি। কঠোর পরিশ্রম করে আজ যারা বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত, মাঝে মাঝে সেই সব সফল ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এখানে ক্লাস নিতে। ইতিমধ্যে স্বেচ্ছায় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক কাজী গোলাম মর্তুজা, ডুয়েট ইউনির্ভাসিটি থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা মো. খাইরুল ইসলাম, সরকারি ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ¯œাতক পাশ করা আবীর চৌধুরী সহ আরোও অনেকে এখানে ইংরেজি সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত, রসায়নের মত গরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিনা পারিশ্রমিকে ক্লাস করিয়েছেন। কেন? এই সংগঠন। এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মো. রাজু লস্কর বলেন, বিভিন্ন কারণে যারা লেখাপড়ার সকল সুযোগ সুবিধা সুবিধা পায় না, স্বাভাবিকভাবে তারা শতভাগ সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীদের তুলনায় মানুসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তারা তখন নিজেদেরকে তুচ্ছ মনে করে। তাই অনেকেই মাধ্যমিক পর্যায়ে মাঝপথে লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়। ঐসব পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে “হেল্প ফর ফ্রেন্ডস” । সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোসা. ফারজানা জানান, বন্ধুর কাছে আমরা খুব সহজেই আমাদের পাঠ্য বইয়ের না বুঝতে পারা সমস্যা খুলে বলতে পারি। একবার না বুঝলেও বন্ধুর কাছে নির্ভয়ে বারবার প্রশ্ন করা যায়। সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে এ সংগঠনের তরুন সভাপতি সৈয়দ বজলুল হক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. হাসান জানান, এর চারটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে- (১) কোন পারিশ্রমিক ছাড়া পাঠ বুঝতে সহায়তা করা। (২) শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা করা। (৩) শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করা। (৪) সমাজকল্যাণমূখী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা। “হেল্প ফর ফ্রেন্ডসে” ক্লাস করতে আসা পঙ্গু বাবার জ্যেষ্ঠপুত্র, বর্তমান দশম শ্রেণির ছাত্র মো. রাজীব জানান, আমার বাবার কয়েক বছর আগে ঝড়ের কবলে ঘর চাপা পড়েন। এতে তার দুটো পা অচল হয়ে যায়। আমাকে বেশির ভাগ আমাদের চায়ের দোকানে বসতে হয়। তাই ঠিকমত স্কুলে যেতে পারি না। “হেল্প ফর ফ্রেন্ডসের” অস্থায়ী কার্যালয়ে আমি প্রতি শুক্রবার সহ সকল বন্ধের দিন ফ্রি ক্লাস করি। মাংসের দোকানে কাজ করা দশম শ্রেণির ছাত্র সজল সহ অনেকেই জানান, আমাদের বন্ধুদের পাঠ সহায়তা ক্লাস আমরা খুব সহজেই বুঝি। সংগঠনটির বিভিন্ন পদে দায়িত্বরত রয়েছেন, মো. নাঈম খান, মো. সুমন, মো. হৃদয়, তানভীর, রিমন, কামরুন্নাহার নিসা, শ্রাবনী, আয়েশা, জয়ন্তীকা দাস ও সিয়াম সহ এক ঝাাঁক সাদা মনের মেধাবী তরুন-তরুনী। কতটা উদার হলে নিজেকে পরের তরে বিলিয়ে দেয়া যায়, তা দেখতে চাইলে এই নৈস্বর্গিক বন্ধুত্বের অনন্য দৃষ্টান্তের সংগঠন হেল্প ফর ফ্রেন্ডস কার্যালয়ে আসতে হবে।
Leave a Reply