স্টাফ রিপোর্টার ॥ জেলার গৌরনদী উপজেলার ইজিবাইক চালক মামুন রাঢ়ী (২৯) চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হয়নি আজও। বিগত চার মাসের ব্যবধানে উপজেলায় পাঁচটি লাশ উদ্ধার করা হলেও ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করতে না পারায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের অজানা আতংক বিরাজ করছে।
সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ আগষ্ট রাতে উপজেলার বাটাজোর থেকে নিজের ইজিবাইকসহ নিখোঁজ হয় পাশর্^বর্তী উজিরপুর উপজেলার মোড়াকাঠী গ্রামের আব্দুস সালাম রাঢ়ীর পুত্র মামুন রাঢ়ী (২৯)। নিখোঁজের সাতদিন অর্থাৎ ২৬ আগষ্ট সকালে বার্থী বাজার সংলগ্ন খালের মধ্যে ভেসে উঠে মামুনের মুখ থেতলানো গলাকাটা ক্ষতবিক্ষত লাশ। এঘটনায় নিহত মামুনের পিতা আব্দুস সালাম রাঢ়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যার তিনমাস পার হলেও এখনো কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে উপজেলার বাটাজোড় দেওপাড়া গ্রামের একটি পুকুরে ভেসে উঠে পঞ্চাষোর্ধ অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ। এঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা করা হয়। লাশের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন না পাওয়া গেলেও লাশটি কিভাবে ওই পুকুরের মধ্যে এসেছে তার কুলকিনারা করতে পারেনি কেউ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ১৪ নভেম্বর দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ বিল্বগ্রাম এলাকার একটি বাঁশ বাগানে গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় মধ্য বয়সি অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ। ধারনা করা হচ্ছে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছে। লাশের পরিচয় কিংবা শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন না পাওয়া গেলেও কি কারনে ওই ব্যক্তি নির্জন জংগলে গিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার বার্থী বাজার সংলগ্ন মাদ্রাসা মাঠের সামনে খালের মধ্যে থেকে বস্তা ভর্তি অবস্থায় উদ্ধার হয় অজ্ঞাত যুবতী (২৮) অর্ধগলিত লাশ। ধারনা করা হচ্ছে ওই যুবতীকে নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ গুম করতে বস্তায় ভরে খালের মধ্যে রেখে গেছে হত্যাকারীরা। এঘটনার একদিন পর শুক্রবার (২০ নভেম্বর) রাতে উপজেলার ভুরঘাটা বাসষ্ট্যান্ড থেকে একটি যাত্রিবাহী বাসের মধ্যে ড্রাম ভর্তি নারীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশের সদস্যরা। পুলিশ প্রাথমিক ভাবে লাশের পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারলেও লাশ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হলে শনিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় লাশের পরিচয় নিশ্চিত করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদস্যরা।
জানা গেছে, নিহত ওই নারীর নাম সাবিনা ইয়াসমিন (৩৫)। সে গৌরনদী পৌরসভার দিয়াশুর মহল্লার কাতার প্রবাসী শহিদুল ইসলামের স্ত্রী এবং তিন সন্তানের জননী। নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন নিহত সাবিনা ইয়াসমিন। বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে দুই সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি দিয়াশুরে আসেন। শুক্রবার সকালে সন্তানদের রেখে বরিশালে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে লাশ হয় সাবিনা। এঘটনায় শনিবার পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় রবিবার বিকেলে উপজেলার বাঘার গ্রাম থেকে রহিমা বেগম (৪৮) নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত রহিমা বাঘার গ্রামের আব্দুল খালেক হাওলাদারের স্ত্রী।
সচেতন নাগরিকরা জানান, অপরাধীরা গৌরনদীকে একটি নিরাপদ রুট মনে করে হত্যাকান্ড ঘটিয়ে লাশগুলো গুম করার জন্য এ এলাকায় নিয়ে আসছে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মহাসড়কে টহল বৃদ্ধিসহ কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা।
Leave a Reply