অনলাইন ডেক্স ॥ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে থাকা কোন্দলের কথা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে জানালেন তৃণমূল নেতারা। তাদের মন্তব্য, ‘আওয়ামী লীগের শত্রু আর কেউ নয়, আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ।’ গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের ভেতরে সবুজ মাঠে বিশেষ বর্ধিত সভা ২০১৮ দ্বিতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের সব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, মহানগরের অন্তর্গত কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা। এই বিশেষ বর্ধিত সভায় দলসমর্থিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
কোন্দল নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সবার মতামতের ভিত্তিতেই প্রার্থী মনোনয়ন দেবো।’ এরপর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি তার কাছে ওয়াদা করেন তৃণমূলের নেতারা। দলের ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করার কথা বলেন তারা। বিশেষ বর্ধিত সভায় এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর নিজের বক্তব্য শেষে তৃণমূল নেতাদের কথা শোনেন শেখ হাসিনা। তখন তারা স্থানীয় উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খো কো মারমা তার বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ফলে পাহাড়ি মানুষের জীবনমান উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। কেউ কেউ স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দিতে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে অনুরোধ করেন। নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার নগরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নীলুফার ইয়াসমিন ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুসকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানান। আরও যারা যা বললেন: কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, নৌকা যার হাতে যাবে তার পক্ষেই আমরা কাজ করবো। তবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সম্মানী খুবই নগণ্য। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। উখিয়া-টেকনাফে যোগাযোগ ব্যবস্থা চার লেনে উন্নীত করে দেওয়া, কক্সবাজারে মেডিক্যাল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর দ্রুত স্থাপন করা এবং মাদকদ্রব্য প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাই। ঝালকাঠির কৃত্তিপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শঙ্কর মুখার্জি বলেন, আমি একজন সাধারণ মানুষ। হাঁস-মুরগী লালন-পালন করি। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী বলে আমাকে এখানে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। এ সুযোগ অন্য কেউ দিতো না। সবাই উন্নয়নের কথা বলেন, উন্নয়ন দেখতে হলে গ্রামে আসেন। আমাদের গ্রামে কোনও ছনের ঘর নেই। ২০০১ সালের সেই ভয়াবহতা যারা দেখেননি, তারা বুঝবেন না জামায়াত-বিএনপি কী জিনিস। তাই আপনাদের বলবো, কোনও অবস্থায় যেন সেই জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় না আসতে পারে। এজন্য আমাদের ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমির আলী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা আপনাকে সিলেটের ১৯টি আসন উপহার দেবো। সিলেট সিটি করপোরেশনে দল থেকে মনোনীত প্রার্থীকে আমরা মেয়র পদে বিজয়ী করবো। সিলেটের ওই আসন থেকে শফিকুর রহমান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানাই। আমাদের নৌকা আমাদের ফিরিয়ে দিন। বরিশাল মহানগরের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফারুক হুমায়ুন বলেন, দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ করে এমন সুযোগ পাইনি। আজ কথা বলার যে সুযোগ পেয়েছি সেজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে মেয়র নির্বাচিত করে আপনাকে বরিশাল থেকে বিজয় উপহার দেবো। সুনামগঞ্জের মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত তালুকদার বলেন, আমরা গ্রাম থেকে এসেছি। আমাদের কোনও কথা বলার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের শত্রু আর কেউ নেই। নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ হয়ে যায়। আমরা কোনও নেতার গ্রুপিংয়ে যাবো না। নেত্রী যাকে নৌকা দেবেন আমরা তাকে ভোট দেবো। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা বুঝি নৌকা যেদিকে, শেখ হাসিনা সেদিকে। পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্ল্যাহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মন্ডল বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। নৌকার জয়ের জন্য কাজ করে যাবো। যত দ্বিধা-বিভেদ থাক না কেন, কাঁধে কাঁধ ও হাতে হাত মিলিয়ে নৌকাকে জয়ী করবো।
Leave a Reply