পদ্মা সেতু চালুর দিন থেকেই সড়কযান ও ট্রেন চলবে- এমন ঘোষণায় চলছে নির্মাণযজ্ঞ। প্রকল্পে অবশ্য সেতুর কাজ এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে রয়েছে রেল। তাই শুরুর দিন ট্রেন চলাচলের সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা সেতু কর্তৃপক্ষ রেলকে সেতুর অংশে কাজের সুযোগ দেবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। তা ছাড়া পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে আর পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ চলছে ২০১৮ সালের ৩ জুলাই থেকে।
জানা যায়, মূল ঠিকাদারের দায়িত্ব হচ্ছে পদ্মা সেতু এবং এর দুই পাড়ে সাড়ে ৪০০ মিটার পর্যন্ত রেললাইন বসানোর জন্য উপযুক্ত করে দেওয়া। সেই কাজে তাদের অগ্রগতি সাড়ে ৮২ শতাংশ। আর সেতুতে এবং দুই পাড়ে রেললাইন বসানোসহ অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব রেলওয়ের। এ জন্য ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে পদ্মা রেল লিংক প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প চলমান। নভেম্বর পর্যন্ত সেই কাজের সার্বিক অগ্রগতি কেবল ৩২ শতাংশ। এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সৃষ্টি করা যাবে না। তবে প্রথমে ভাঙা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ট্রেন চালুর চেষ্টা চলছে।’
রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, বহুল কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙা পর্যন্ত পথ নির্মাণ হলে পদ্মা সেতুর সড়কপথ চালুর দিনেই ভাঙা থেকে রাজবাড়ীর পাচুরিয়া সেকশনের মাধ্যমে রেল নেটওয়ার্ক চালুর টার্গেট। রেলওয়ের অধীনে পরিচালিত এ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় বাধা ছিল ডিজাইন জটিলতা। ভার্টিক্যাল ও হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্সসহ মাওয়া প্রান্তের ক্রসিং পয়েন্টের ডিজাইন নিয়ে সৃষ্টি হয় এ সমস্যা। সেতুর দুপ্রান্তে রেল প্রকল্পের জাজিরা অংশে ভায়াডাক্ট ২-এর পিয়ার নং পিএন-১৪ ও ১৫ এবং মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্ট ৩-এর পিএস ২৫-১ ও ২৫-২ এলাকায় উঁচু এবং প্রস্থ ‘সঠিক’ না হওয়ায় রেলের ওই অংশের চলমান কাজ বন্ধ করে দেয় সেতু কর্তৃপক্ষ। এ জন্য চার মাস কাজ বন্ধ থাকে। পরে অবশ্য সেতু বিভাগের প্রস্তাবিত ডিজাইনে কাজের সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ।
মূল পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজটি করছে দেশের সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে তৈরি হয়েছে সেতুর কাঠামো। ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পদ্মা সেতুতে রোডওয়ে স্ল্যাব বসাতে হবে ২ হাজার ৯১৭টি। এর মধ্যে গেল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ হাজার ৩৩৩টি স্থাপন করা হয়েছে। সবগুলো বসানোর পর পিচ ঢালাই, বিভাজক, প্রতিরক্ষা দেয়াল, সড়কবাতিসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করতে হবে। দুপাড়ে ভায়াডাক্টের কিছু কাজও বাকি আছে। এসব কাজ শেষ হলেই যানবাহন চলতে পারবে। পাশাপাশি চলছে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজও। রেললাইনের ২ হাজার ৯৫৯টি স্ল্যাবের মধ্যে ১ হাজার ৯৪২টি এর মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে। রেলপথের ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিআরইসি)।
সূত্র আরও জানায়, পদ্মা সেতু দিয়ে ৭৬০ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের গ্যাস পাইপলাইন যাবে। পুরো সেতুর কাজ শেষ না হলে সেই লাইনের কাজও শেষ করা যাবে না। সেতুতে বসানো হবে ১৫০ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের ফাইবার অপটিক ও টেলিফোন কেবলের লাইন। ভাটিতে দুই কিলোমিটার দূরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের লাইনও টানা হবে। অবশ্য এর জন্য আলাদা খুঁটি ও অন্যান্য অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলমান।
Leave a Reply