কক্সবাজার-৪ আসনের (উখিয়া-টেকনাফ) বিতর্কিত সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির ঔরসজাত ছেলে দাবি করে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন মোহাম্মদ ইসহাক নামের ২৬ বছর বয়সী এক যুবক। ওই যুবকের দাবি, সাক্ষী রেখে কলেমা পড়ে তার মা সুফিয়া বেগমকে ১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল বিয়ে করেন বদি। দীর্ঘসময় ধরে স্ত্রী-সন্তান অস্বীকার করায় গত রবিবার কক্সবাজারের সহকারী জজ আদালতে আবেদন করা হয় তার পক্ষ থেকে। আদালতের সহকারী জজ মো. জিয়াউল হক এ অভিযোগ আমলে নিয়ে সাবেক এমপি বদিসহ সব বিবাদীর প্রতি সমন জারি এবং ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদী মোহাম্মদ ইসহাক বদিকে পিতা দাবি করে নিজেকে চরম নিরাপত্তাহীন মনে করেন তার মা সুফিয়া খাতুন। বদির চাচা টেকনাফ পৌরসভার মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলাম, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়েছে মামলায়। বাদীর অভিযোগ, তার মা ও বাবার (বদি) বিয়ে পড়ান বদির পারিবারিক আবাসিক হোটেলে কর্মরত
তৎকালীন মৌলভী আবদুস সালাম। বিয়ের সাক্ষী ছিলেন বদির দারোয়ান এখলাস ও বদির পরিচিত দুই ব্যক্তি। ইসহাক তার গর্ভধারিণী মায়ের কাছেই শুনেছেন, তার পিতা আবদুর রহমান বদি। মায়ের হাত ধরে অসংখ্যবার পিতার কাছে যান। কিন্তু ইবাদতখানায় কলেমা পড়ে মাকে বিয়ের পর সন্তান হিসেবে অস্বীকার করায় ছেলের পরিচয় পেতে মোহাম্মদ ইসহাক আদালতের দ্বারস্থ হন এবং নিজেকে পিতৃপরিচয়হীন চরম অনাদর-অবহেলায় বেড়ে ওঠা হতভাগ্য বদির বড় সন্তান দাবি করেন।
এ ছাড়া পিতা বদির চেহারার সঙ্গে নিজের মিল থাকার কথা উল্লেখ করে বাদী ইসহাক এ অভিযোগের পর সাংবাদিকদের মাধ্যমে নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের ওপর মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মোহাম্মদ ইসহাকের মা ও বদির স্ত্রী দাবিদার সুফিয়া খাতুন ক্রন্দনরত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলেটি জীবনে সুখ পায়নি, তাকে (ইসহাক) একটু দেখেন। জন্মের আগেই বদি ইসহাককে খুন করতে চায়। এখন সুযোগ পেলেই যে কোনো সময় ওকে গুম-খুন করতে পারে আশঙ্কা স্ত্রী দাবিদার সুফিয়া খাতুনের। তিনি বলেন, খুন-খারাবি বদির জন্য কোনো ব্যাপার নয়। নিজের স্বার্থের জন্য তিনি জীবনে করেননি এমন কোনো অপকর্ম নেই। অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে ইসহাককে কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে বিবিএ পাস করিয়েছি। সে এখন এমবিএ পড়ে। সামনে তার চাকরি ও বিয়ে-শাদির প্রয়োজন। তাই সামাজিক পরিচয়ের জন্য পিতার প্রয়োজন না হলে বদির জন্য আমরা আদালতেও যেতাম না।
বাদী ইসহাক জানান, তার বয়স বাড়ার কারণে পিতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। বিষয়টি নিয়ে মা-ছেলে বদির ছোট বোন শামসুন নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শামসুন নাহার তাকে টেকনাফ পৌরসভা থেকে আসল পিতার পরিচয় গোপন করে ভুয়া জন্মনিবন্ধন ও নাগরিকত্ব সনদ করে দেন। এতে স্বাক্ষর করেন বদির ভাই প্যানেল মেয়র মৌলভী মুজিব। তারা পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন এতদিন। আবদুর রহমান বদি মানসম্মান ও রাজনৈতিক সমীকরণ দেখিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। এখন আমাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে বাড়াবাড়ি না করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাই কোনো উপায় না দেখে পিতৃত্বের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হলাম।
স্কুল-কলেজের সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রে নকল পিতার নাম বাদ দিয়ে আসল পিতা আবদুর রহমান বদির নাম সংযুক্ত এবং পিতৃত্ব ঠিক করে দেওয়ার জন্যই এদের বিবাদী করা ছাড়া উপায় ছিল না বলে জানিয়েছেন ইসহাকের আইনজীবীরা।
Leave a Reply