গর্ভবতীর গর্ভকালীন যত্ন বলতে শুধু স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত চেকআপ, নিয়ম করে রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাম, কিছু ভিটামিন এবং ভালো খাওয়ার উপদেশই নয়, মা যদি হন ডায়াবেটিক, তবে তার চোখের দৃষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি অন্যতম।
যাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ : আগে থেকে ডায়াবেটিস আছে যাদের এবং তা নিয়ন্ত্রণে নেই, সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল রয়েছে, মদ্যপান ও ধূমপান করেন যেসব মা- তাদের জন্য রোগটি ঝুঁকিপূর্ণ।
উপসর্গ : ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি প্রাথমিক অবস্থায় কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমেরিকায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ সদ্য শনাক্ত ডায়াবেটিস রোগীর কমবেশি রেটিনোপ্যাথি পাওয়া যায় এবং অর্ধেকই জানেন না, তার চোখে সমস্যা আছে।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি : ডায়াবেটিসজনিত কারণে চোখের রক্তনালিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসে। সেই রক্তনালি থেকে রক্তের জলীয় অংশ নিঃসৃত হয় বা রক্তক্ষরণ হয়। এতে দৃষ্টি সমস্যা, এমনকি অন্ধত্ব দেখা দেয়।
চোখ পরীক্ষা : ডায়াবেটিস হলো কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। এ অন্ধত্ব প্রতিরোধে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হওয়া প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও রেটিনোপ্যাথি আছে, তাদের চোখের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। যাদের আগে থেকে রেটিনোপ্যাথি নেই, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটি নতুন করে দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের রক্তের সুগারের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত বা বেশি।
যখন এবং যেভাবে পরীক্ষা : সম্ভব হলে গর্ভাবস্থার আগেই একবার চোখ পরীক্ষা করে নিন। যদি রেটিনোপ্যাথি থাকে, তবে রোগের মাত্রা বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। যদি রেটিনোপ্যাথি না থাকে, তবে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার চোখ পরীক্ষা করুন। যদি গর্ভকালীন পরীক্ষায় রেটিনোপ্যাথি ধরা পড়ে, তবে ২-৩ মাস অন্তর নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে হবে। যদি এর মধ্যে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, হঠাৎ কম দেখা, এক জিনিস দুটো দেখা, চোখের সামনে কালো স্পট দেখা ইত্যাদি উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়, তবে দ্রুত চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। চোখ পরীক্ষার সময় অবশ্যই চোখের দৃষ্টি, চোখের প্রেসার, রেটিনা বা অফথেলমোস্কোপি এবং প্রয়োজন হলে ওসিটি করে দেখতে হবে।
রেটিনোপ্যাথি প্রতিরোধে করণীয় : ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। মদ্যপান ও ধূমপান করা যাবে না। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা হালকা কাজ করতে হবে। অনেকে মনে করেন, গর্ভাবস্থায় চোখের চিকিৎসা করানো ঠিক নয়। ডেলিভারির পর চোখের ব্যবস্থা নেওয়া ভালো। এটি ভুল ধারণা। কারণ চোখ পরীক্ষায় যেসব ড্রপ ব্যবহার করা হয়, তা গর্ভবতীর জন্য নিরাপদ। চিাকৎসায় লেজার প্রয়োগও মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর নয়।
Leave a Reply