আরও একটি বছর টেলিভিশনের নাটক ইউটিউবে দেখলেন দর্শক। হাজার হাজার নাটকের ভিড়ে মানসম্পন্ন নাটক যেন হারিয়ে ফেলেছে তার চেনা পথ। আবার বেশিরভাগ নাটকের মানের উন্নতি হয়নি। অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় টিভিতে নাটক দেখা প্রায় ছেড়েই দিচ্ছেন দর্শক। ফলে টিভি নাটকের অবস্থান যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। তাই তো নাটক যেন তার নিজস্ব পথ ইউটিউবকেই বেছে নিয়েছে।
ইউটিউবের বড় সুবিধা হচ্ছে, ভিডিওটি কতবার দেখা হয়েছে, সেটা জানা যায়। আর বর্তমানে ভিউ দিয়েই বিচার করা হয় নাটকটি হিট নাকি ফ্লপ। আগে সিনেমার বেলায় এ শব্দটি ব্যবহার হলেও এখন নাটকে ব্যবহার হচ্ছে। কারণ ইউটিউবে একটি মানহীন নাটকের ‘মিলিয়ন ভিউ’ হলেই কেল্লা ফতে। কারণ সবাই তো ভিউকেই মূল্য দিচ্ছে। আবার যে নাটক নির্মাণ করছেন তিনিও তো ভিউ দেখেই আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে। আবার ভিউয়ের ওপর ইউটিউব থেকে ভালোই আয় হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ উপায়ে অর্থ রোজগারের একটি ভালো উপায় দেখে অনেক সংগীত প্রযোজকও ঝুঁকছেন নাটক নির্মাণের দিকে।
২০২০ সালে আলোচনা করার মতো তেমন নাটক তৈরি হয়নি। আবার করোনার কারণে প্রায় ৬ মাস সবকিছুর শুটিং বন্ধ রাখা হয়েছে। সে কারণেও নাটকের বাজারে বড়সড় ধাক্কা লেগেছে। তার পরও কয়েকটি নাটক ভিউ হিসেবে ভালো করেছে। তবে নাটকের হিসেবে গত কয়েক বছর অপূর্ব, আফরান নিশো, মেহজাবীন, তানজিন তিশারা রাজত্ব করেছেন।
২০২০ সালে কিন্তু অনেক নতুন মুখ দেখা গেছে। যারা একের পর এক নাটকে অভিনয় করে একতরফা বাজার ভেঙে দিয়েছেন। নিজেরাও জানেন না, ঠিক কতগুলো নাটকে অভিনয় করেছেন তারা। নতুনদের তালিকায় তাসনিয়া ফারিন, কেয়া পায়েল, সারিকা সাবা, জিয়াউল হক পলাশ, শামীম হাসান সরকার, জোভান, মুশফিক ফারহানরা আলোচনায় আছেন। এমনকি বছরে প্রায় শখানেক করে নাটক করেছেন তারা। শিডিউল দিতে পারলে হয়তো আরও বাড়ত তাদের অভিনীত নাটকের সংখ্যা। অন্যদিকে নাটকের নাম নিয়ে এর মধ্যে কিছু সমালোচনা শোনা গেছে। পাশাপাশি নাটকের সংলাপ নিয়েও সমালোচনা উঠেছে।
টেলিভিশন নাটকের এ বছর কেমন গেল? এ প্রশ্নে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এসএ হক অলীক বলেন, ‘এ বছর করোনার কারণে অনেকটা সময় শুটিং বন্ধ ছিল। তার পরও বেশকিছু ভালো নাটক হয়েছে। কিন্তু টেলিভিশনের চেয়ে নির্মাতারা অনলাইনের জন্য নাটক নির্মাণে বেশি আগ্রহী। এটা ভালো সাইন নয়, বরং সংকট। কারণ ইউটিউবের জন্য নাটক নির্মিত হলে বাণিজ্যিক লাভের বিষয়গুলোই চিন্তা করা হবে, আমাদের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার কথা সেখানে ভাবার সুযোগ কম। টেলিভিশনগুলো তাদের ইউটিউব চ্যানেলে নাটকগুলো চালালে অসুবিধা নেই। তার পরও আমরা আশা করছি, নির্মাতার নিজস্ব সেন্সরশিপ কাজে লাগাবেন।’
২০১৯ সালে বেশকিছু ভালো নাটক তৈরি হয়। নাটকগুলো নিয়ে ভীষণ আলোচনাও হয়েছিল। সে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন টিভি নাটকের অধিকাংশ নির্মাতা। এমনকি নাটকের প্রধান সমস্যা বাজেট সংকট কাটিয়ে ওঠার ভালো কোনো পথই বের করতে পারেনি কেউ। নাটকের বাজেট গেছে আরও কমে। সব মিলিয়ে বলা চলে, টেলিভিশন নাটকের জন্য ২০২০ খুব বেশি ভালো সময় ছিল না।
Leave a Reply