ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে গুচ্ছপদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তাবনা থাকলেও সেই দুর্ভোগই আর কমছে না। পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বরং আরো বাড়াবে। এ ছাড়া অভিভাবকদের খরচ কমানোর যে পরিকল্পনা ছিল সেটিও আর কার্যকর হচ্ছে না। বেশ কিছু নিয়মের কারণে কঠিন শর্তে আটকে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভর্তি ও আবেদনের প্রক্রিয়ায় মূলত তিনটি শর্তের কারণে ঝরে পড়বেন অনেক শিক্ষার্থী। বিশেষ করে ন্যূনতম জিপিএর বাধ্যবাধকতা থাকায় অনেক শিক্ষার্থী গুচ্ছপদ্ধতির পরীক্ষায় অংশই নিতে পারছেন না। আবার গুচ্ছপদ্ধতির পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চাহিদা ও পছন্দমতো আরো একাধিক পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ থাকায় দুর্ভোগ ও আর্থিক দিক দিয়েও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সীমাহীন কষ্টভোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সেকেন্ডটাইমার শিক্ষার্র্থীকে (দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক) না নেয়ার ঘোষণায় বহু শিক্ষার্থী ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গুচ্ছপদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত (এমসিকিউ) প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হবে। এবার ১০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্নপত্রে দেশের ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা ইউনিট না থাকলেও বিজ্ঞান ইউনিটের জন্য বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটির বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে। ভর্তির জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম জিপিএ নির্ধারণ করা হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) গতকাল শনিবার গুচ্ছপদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার মান বণ্টন ও পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন সভায় অংশ নেয়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ১০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্নপত্রে আমরা পরীক্ষা নেবো। এতে লিখিত পরীক্ষা থাকবে না। তা ছাড়া আমাদের আগের সিদ্ধান্ত ছিল তিন ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার, সেটাই বহাল থাকছে।
অন্য দিকে সভার আরেকটি সূত্র জানায়, গুচ্ছপদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য ন্যূনতম একটি যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএর চতুর্থ বিষয় ছাড়া মোট ৭ হতে হবে। ব্যবসায় শিক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএর চতুর্থ বিষয় ছাড়া মোট সাড়ে ৬ এবং মানবিকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএর চতুর্থ বিষয় ছাড়া মোট ৬ থাকতে হবে।
এতে যেসব শিক্ষার্থী এর কম জিপিএ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হবেন, তারা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার যুগ্ম আহবায়ক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন জানান, গুচ্ছপদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা কমিটি শুধু পরীক্ষাটা নেবে। পরীক্ষার ফল দেয়ার পর কোন বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে ভর্তি নেবে সেটা তাদের ব্যাপার। এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর কত মার্ক যোগ করা হবে, গ্রুপ পরিবতর্ন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরে নির্ভর করবে। যদিও এর আগে বিজ্ঞান, ব্যবসায় ও মানবিক- এ তিন ইউনিটে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে বলে ১ ডিসেম্বর এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
এ দিকে গুচ্ছপদ্ধতির এই পরীক্ষায় সেকেন্ড টাইমারদের ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা ভর্তির সুযোগ পাবেন না বলে জানিয়েছেন ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভিসি প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান।
সম্প্রতি সাংবাদিকদের তিনি বলেন, গুচ্ছপদ্ধতিতে কোন কোন বছরের শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে সেটা এখনো কনফার্ম না। বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ২০১৯-২০ ব্যাচের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরও ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে কিন্তু সব বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো তাদের ভর্তি নেবে না।
জবির ভর্তিপ্রক্রিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি আরো বলেন, তিন বছর আগে থেকে আমরা পুরাতন ছাত্রদের (সেকেন্ড টাইমার) ভর্তি করছি না। এবার গুচ্ছতেও নেয়া হবে না। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বেটার ছাত্র পাওয়ার আশায় কিংবা সব ছাত্র যাতে ভর্তির সুযোগ পায় সে জন্য সেকেন্ড টাইমারদের হয়তো সুযোগ দেবে। তার মতে, গুচ্ছপদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় সেকেন্ড টাইমাররা আবেদন করতে পারবেন তবে ভর্তি নেবে কি না তা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেবে।
সূত্র মতে, এবার যে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে সেগুলো হলো- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
Leave a Reply