দখিনের খবর ডেস্ক ॥ এবারের অতিথি দলটি দুর্বল হতে পারে, আগের দুই সিরিজে তারা ছিল পূর্ণ শক্তির। বাংলাদেশও ছিল তাই। ২০১৮ সালে দুই বার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ নেপায় বাংলাদেশ। একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এবং অন্যটি দেশের মাটিতে। দুটি সিরিজই ছিল ৩ ম্যাচের, এবং বাংলাদেশ দুটি সিরিজই জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। এবার এক ম্যাচ হাতে রেখেই করোনা পরবর্তী প্রথম সিরিজ জয় করে নিল বাংলাদেশ। মিরপুরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টাইগাররা গতকাল জিতেছে ৭ উইকেটে। উইন্ডিজের বিপক্ষে এলো হ্যাটট্রিক সিরিজ জয়। সব মিলে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৫টি সিরিজ জিতল টাইগাররা। ১৪৮ রান তাড়ায় নেমে ঝড়ো শুরু করেছিলেন লিটন দাস। ৪টি বাউন্ডারি মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন। যখন তিনি থিতু হয়ে গেছেন তখনই ছন্দপতন। বোলিংয়ে এসেই আকিল হোসেন তুলে নেন এই ড্যাশিং ওপেনারকে। এলবিডাব্লিউ হয়ে লিটন ফিরেন ২৪ বলে ২২ রান করে। ৬ষ্ঠ ওভারের ৫ম বলে বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের পতন হয় দলীয় ৩০ রানে। এরপর অধিনায়ক তামিম ইকবাল আর নাজমুল হোসেন শান্ত জুটিতে টাইগাররা ছুটছিল। জুটিতে ৪৭ রান আসতেই আবারও ভাঙন। জেসন মোহাম্মদের বলে কেয়র্ন ওটলির দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন ২৬ বলে ২ চারে ১৭ রান করা শান্ত। তামিমের সঙ্গী হন আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। তামিম-সাকিব জুটি জমে গিয়েছিল। এর মাঝেই ইনিংসের ত্রয়োদশ ওভারের প্রথম বলে জেসন মোহাম্মদকে বাউন্ডারি মেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তামিম। জিম্বাবুয়ে ছাড়া এই প্রথম অন্য কোনো দলের বিপক্ষে হাজার রান ছুঁতে পারলেন বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান। এরপর তামিম ৭৫ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৪৮ নম্বর হাফ সেঞ্চুরি। তবে ফিফটি ছোঁয়ার পরের বলেই রেইফারের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন দেশসেরা ওপেনার। তার স্ট্রাইক রেট গতকাল ৬৫.৭৯। দলীয় ১০৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের সঙ্গী হন মুশফিকুর রহিম। এই জুটিতে তরতর করে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশের স্কোর। পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী দারুণ ব্যাটিং করছিলেন সাকিব। তাকে স্রেফ সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক। এই জুটিতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ১৬.৪ ওভার এবং ৭ উইকেট হাতে রেখেই বাংলাদেশের সিরিজ নিশ্চিত হয়ে যায়। সাকিব ৪৩* এবং মুশফিক ৯* রানে অপরাজিত থাকেন। আগামী ২৫ জানুয়ারি সোমবার চট্টগ্রামে হবে তৃতীয় ওয়ানডে। এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৩.৪ ওভারে ১৪৮ রানে অল-আউট হয়েছে উইন্ডিজ। তাদের খেলার গতির কোনোভাবেই ওয়ানডে মেজাজের ছিল না। সুনিল অ্যামব্রিসের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেছেন অভিষিক্ত কেয়র্ন ওটলি। দুই দিক থেকে মুস্তাফিজুর রহমান আর রুবেল হোসেন তাদের চেপে ধরেন। বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন দ্য ফিজ। ম্যাচের ৫ম ওভারে তার বলে সুনিল অ্যামব্রিসের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বলটি দারুণ দক্ষতায় তালুবন্দি করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ রানে প্রথম উইকেট হারায় উইন্ডিজ। এরপর ইনিংসের ১৪তম ওভারের প্রথম বলে দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলীয় ৩৬ রানে মিরাজের বলে এক্সট্রা কাভারে অভিষিক্ত কেয়র্ন ওটলির (২৪) ক্যাচ নিয়েছেন তামিম ইকবাল। একই ওভারের চতুর্থ বলে আবারও শিকার ধরেন মিরাজ। সরাসরি বোল্ড করে দেন ২২ বলে ৫ রান করা জসুয়া ডি সিলভাকে। ৩৭রানে তৃতীয় উইকেট হারায় উইন্ডিজ। পরের ওভারে আবারও বিপদ। বোলার সাকিব আল হাসান। ১৫তম ওভারের শেষ বলে আন্দ্রে ম্যাককার্থিকে (৩) সরাসরি বোল্ড করে দেন স্বরূপে ফেরা বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার। ১৮তম ওভারে আবারও উইন্ডিজের বিপর্যয়। রান নেব কি নেব না করতে করতে রান-আউট হয়ে যান কাইল মেয়ার্স। মাত্র ৪১ রানে ক্যারিবীয়দের ইনিংসের অর্ধেক শেষ হয়ে যায়। এরপর অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ আর এনক্রুমা বনার হাল ধরার চেষ্টা করেন। দলীয় ৬৭ রানে আবারও শিকারী মেহেদী মিরাজ। তার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন জেসন মোহাম্মদ (১১)। পরবর্তী শিকারী হাসান মাহমুদ। ২৫তম ওভারের চতুর্থ বলে ২৫ বলে ২০ রান করা এনক্রুমা বনারকে সরাসরি বোল্ড করে দেন এই পেসার। উইন্ডিজের এরপর কিছু আর করার ছিল না। তাদের গুটিয়ে যাওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে নিজের তৃতীয় শিকার ধরেন মেহেদী মিরাজ। এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরেন রেমন রিফার (২)। দলের রান তখন মাত্র ৮৯। অতিথিরা শেষ পর্যন্ত একশ ছুঁতে পারবে কিনা সেই শংকা পেয়ে বসে। তবে রোভম্যান পাওয়েল আর আলজারি জোসেফের সৌজন্যে তিন অংক ছুঁয়ে ফেলে অতিথিরা। ৯ম উইকেটে দুজনে গড়েন ৩২ রানের জুটি। দলীয় ১২০ রানে আলজারি জোসেফকে (১৭) লিটন দাসের গ্লাভসবন্দি করে জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজুর রহমান। শেষ উইকেটটা ফেলতে সময় লাগছিল টাইগারদের। উইকেটে গেড়ে বসেছিলেন রোভম্যান পাওয়েল। তাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন শেষ ব্যাটসম্যান আকিল হোসেন। শেষ পর্যন্ত ৬৬ বলে ৪১ রান করা পাওয়েলকে নিজের চতুর্থ শিকার পরিণত করে ক্যারিবীয়দের ইনিংসে ইতি টানেন মেহেদি মিরাজ। ৪৩.৪ ওভারে ১৪৮ রানে অল-আউট হয় উইন্ডিজ। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়াডেতে গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ নেমেছে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশে আরও একজনের অভিষেক হয়েছে। একজন পেসার একজন কমিয়ে ব্যাটিংয়ে শক্তি বাড়িয়েছে তারা। জায়গা হারিয়েছেন পেসার শেমার হোল্ডার। তার জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন ৩১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান কেয়র্ন ওটলি। যাকে গতকাল ওপেন করতে দেখা গেছে। গত ম্যাচে উইন্ডিজের ৬ ক্রিকেটারের অভিষেক হয়েছিল। বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল: জেসন মোহাম্মেদ (অধিনায়ক), সুনিল আমব্রিস, জশুয়া দা সিলভা, আন্দ্রে ম্যাককার্থি, এনক্রুমা বনার, কাইল মেয়ার্স, রভম্যান পাওয়েল, কেয়র্ন ওটলি, রেমন রিফার, আলজারি জোসেফ, আকিল হোসেন।
Leave a Reply