দখিনের খবর ডেস্ক ॥ এদেশে কর্মরত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর নানা কৌশলে সরকারের বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। সরকার ওসব কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকিতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। ওই লক্ষ্যে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লেনেদেনের তথ্য নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বৈশ্বিক তথ্যভান্ডারের যুক্ত হতে যাচ্ছে। ওই ধরনের তথ্য সংরক্ষণকারী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই তথ্যভান্ডারে যুক্ত হতে পারলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। ফলে ওসব কোম্পানির যথাযথ অডিট করা তথা লেনদেন আইনানুগ উপায়ে পাঠানো কিংবা বেশি দাম দেখিয়ে কর ফাঁকি দিতে অর্থ পাঠানো হয়েছে কিনা তা উদঘাটন করা সম্ভব হবে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এদেশে কর্মরত বহুজাতিক কোম্পানিসহ আন্তর্জাতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে কাক্সিক্ষত কর আদায়ের লক্ষ্যে সরকার ২০১২ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন প্রণয়ন করে। তবে বিগত ২০১৪ সালে তা কার্যক্রম শুরু করে এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল গঠন করা হয়। অবশ্য আইন প্রণয়নের এতো দিনেও বৈদেশিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর লেনদেনে স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। সূত্র জানায়, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লেনদেনের তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা ছিল আন্তর্জাতিক তথ্যভান্ডারে আয়কর বিভাগের প্রবেশাধিকার না থাকা। ফলে সেখান থেকে কোনো পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবে এনবিআর এতোদিন তা শুরু করতে পারেনি। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত একটি কার্যক্রমের মাধ্যমে ওই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান মিলেছে। ফলে ‘সাপোর্টিং দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব পিএফএম রিফর্ম স্ট্র্যাটেজিজ প্ল্যান’ শীর্ষক ওই কার্যক্রমের সহায়তায় ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। সূত্র আরো জানায়, বিদেশি কোম্পানিগুলোর শাখা কোম্পানি সুদ, মুনাফা, কোনো সম্পদ কিংবা পণ্যের মূল্য মূল কোম্পানিতে পাঠায়। তাছাড়া পণ্য বা সেবা আমদানির মূল্যও মূল কোম্পানি বা অন্য কোনো কোম্পানিকে পাঠায়। সেটিই ট্রান্সফার প্রাইসিং হিসেবে পরিচিত। তবে পণ্যের দর কম বা বেশি দেখিয়ে কিংবা মুনাফার অর্থ প্রেরণে মিথ্যা তথ্য দেয়ার মাধ্যমে কর ফাঁকির পাশাপাশি অর্থপাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ রয়েছে, এর ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে থাকে। কিন্তু কার্যকর কোনো উপায় না থাকায় ওসব কর ফাঁকি অধরাই রয়ে যাচ্ছে। সাধারণত যেসব দেশে কর হার বেশি, সে দেশের প্রতিষ্ঠান থেকে নানা কৌশলে কর হার কম এমন দেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। তাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কর কম দিতে হয়। ফলে তাদের আয় বাড়ে। এটি একধরনের অর্থ পাচার। তাতে প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপেক্ষাকৃত বেশি কর রয়েছে এমন দেশগুলো। এভাবে বিশ্বব্যাপী অনেক বহুজাতিক কোম্পানি কর এড়িয়ে যায় বা ফাঁকি দেয়। অতীতে এনবিআর এ ধরনের কিছু ফাঁকি উদ্ঘাটনও করেছে। শুধু শাখা কোম্পানি এবং মূল কোম্পানি ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের নামে কারসাজির সঙ্গে জড়িত এমন নয়। অন্য কোনো কোম্পানি পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেও মূল্য কারসাজি করে থাকে। এর ফলেও সংশ্লিষ্ট দেশ কাক্সিক্ষত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এদিকে ইতিমধ্যে এনবিআরের ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল থেকে বেশকিছু বহুজাতিক কোম্পানির লেনদেনের বিশেষায়িত নিরীক্ষা করা হয়েছে। বছরে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা আন্তর্জাতিক লেনদেন হয় এমন শতাধিক কোম্পানির লেনদেনের তথ্য নিরীক্ষা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এমন ৯২১টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত এনবিআর। গত বছরের শুরুর দিকে ওসব প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য চেয়ে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল থেকে চিঠি পাঠানো হয়। এক-পঞ্চমাংশ প্রতিষ্ঠানই তাদের ওই সংক্রান্ত তথ্য পাঠায়নি।
Leave a Reply