স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। কিন্তু তার ঘোষণার পরও গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। গণসংযোগকালে মেয়র প্রার্থী তাপস বলেন, আ’লীগকে সমর্থনের বিষয়টি গুজব, সমর্থন জানানো হলে সবার আগে আমি জানতাম।
বেলা সাড়ে ১২টায় বরিশাল নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের টিয়াখালিতে গণসংযোগকালে তাপস বলেছেন, আওয়ামী লীগের সমর্থনের বিষয়টি আমি গণমাধ্যমে দেখেছি, আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কারও যোগাযোগ হয়নি। তবে একটি মহল চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের নিজস্ব স্বার্থের দরদাম কষাকষি চালাতে, যা আমার উপলব্ধি। ব্যক্তিগতভাবে আমার হাতে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাপস আরও বলেন, আমার কথা হলো আওয়ামী লীগের যদি আমাদের সমর্থন প্রয়োজন হয়, তবে সেটা তো বরিশাল মহানগরে আমরা যারা আছি তাদের সমর্থন প্রয়োজন হবে। ঢাকা থেকে একটা ফুঁ দিলেই তো আর বাক্সের মধ্যে ভোট পড়ে যাবে না। ঢাকা থেকে কে, কি বললো তাতে তো খুব বেশি ভোটে প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না। লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেছেন, ‘কেন্দ্র কী করেছে আমি এখনও কিছু জানি না। আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি এবং নির্বাচনের মাঠে থাকবো।’ তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সমর্থক ও ভোটারদের যদি প্রয়োজন পড়ে তবে আমাদের কাছেই তারা আসবে, আমাদেরকেই বলবে, আমরা তাদের সমর্থন দেব। সুতরাং আওয়ামী লীগের আমাদের সমর্থন নেই, সমর্থন কামনাও করে না। আমি আজ একটি পত্রিকায় দেখেছি আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন, উনারা (জাপা) যদি আসে তাহলে ওয়েলকাম, না আসলেও কোনো সমস্যা নেই। তাপস বলেন, আমি সবাইকে বলবো সমর্থনের বিষয়টি একটি গুজব, জনগণকে বলবো এ কথায় কান দেওয়ার দরকার নেই। আমরা মাঠে আছি, গণসংযোগ করছি এবং সব মানুষের একটি প্রত্যাশা আমি যেন মাঠে থাকি। জাপার প্রার্থী বলেন, সমর্থনের বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান যদি ঘোষণা দিয়ে আমার কাছে আসে তখন আমি দেখবো। পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিলো। তখন উনি বলেছিলেন, আমি একজনকে পাঠাবো তার নির্দেশনা মতো কাজ করো। তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, তোমার মতো তুমি কাজ করো। এদিকে বরিশাল মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি একেএম মর্তুজা আবেদিন বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। এরপর মহানগরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকও করেছি। সেই হিসেবে মহানগরের নেতারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে কাজ করবে। যদি ইকবাল হোসেন তাপন চেয়ারম্যানের নির্দেশনার পরও প্রচারণা চালিয়ে থাকেন সেটা তার বিষয়।
বুধবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানান এরশাদ। এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। এই বার্তা অনুযায়ী জাপা মহাসচিব বলেছেন, ‘একটি আধুনিক বরিশাল সিটি করপোরেশন বিনির্মাণ এবং দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে এ সিদ্ধান্তে (আওয়ামী প্রার্থীকে সমর্থন) বিভ্রান্তির কোনও অবকাশ নেই।’ নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে বিজয়ী করতে জাপা নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের পাশে থেকে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি। এই নির্দেশের পর বুধবার সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করে স্বতন্ত্র (জাপা বিদ্রোহী) প্রার্থী বশির আহমদ ঝুনু দলীয় সভাপতির নির্দেশে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাদ সাদিক আবদুল্লাহকে সমর্থন করে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। ঝুনু বলেন, ‘জাতীয় পাটির্র চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছেন। আমি কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে নিজেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীক প্রত্যাশী ছিলেন জাপা বরিশাল সদর উপজেলা সভাপতি বশির আহম্মেদ ঝুনু। তবে ইকবাল হোসেন তাপসকে লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ঘোষণা করায় বশির আহম্মেদ ঝুনু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হরিণ প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। এদিকে বিসিসি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হেলালউদ্দিন জানিয়েছেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তারিখ আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন কাউকে সমর্থন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা হবে অনানুষ্ঠানিকতা মাত্র।’
Leave a Reply