স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্যোগের সময় লিঙ্গভিত্তিক সহিসংতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয়। তবে এক্ষেত্রে নারীরাই বেশি সহিংসতার শিকার হন। যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে ধর্ষণের শিকার হন নারীরা। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বয় প্রয়োজন। আর যেকোন পরিস্থিতিতে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নারীর ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই। গতকাল রবিবার সকালে বরিশাল শহরে ইউনএফপিএ-র সহায়তায় একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘দুর্যোগকালীন লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ’ বিষয়ক এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন বক্তারা।
প্রতিবছরই বাংলাদেশের জনগণ বন্যা, নদীভাঙ্গন এবং ঘূর্নিঝড়ের মত নানা দুর্যোগ মোকাবেলা করে। আর দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নারীরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ৮৭ শতাংশ নারী জীবনের কোন না কোন সময়ে কোন না কোনভাবে নিজ গৃহে সহিংসতার শিকার হন। আর দুর্যোগে বিপর্যস্ত এলাকায় নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যায়। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয় নারীকে। বিশেষ করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারী যৌন হয়রানিসহ নানা হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হন।
একশনএইড বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, উদার, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র্র গঠনের জন্য ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ ও নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এই বিশ্বাস থেকেই ‘দুর্যোগকালীন লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ’ বিষয়ক এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি।
অুনষ্ঠানের শুরুতেই একশনএইড বাংলাদেশ-এর ম্যানেজার কাশফিয়া ফিরোজ বলেন, দুর্যোগের সময় নারীরা নানাভাবে সহিংসতার শিকার হন। এমনকি ত্রাণ সংগ্রহের সময়ও সহিংসতার শিকার হন তারা। তাই দুর্যোগে সাড়া প্রদানে আমরা যারা কাজ করি তাদের পরিকল্পনার মধ্যে এই বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। এতে দুর্যোগে নারীকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বরিশাল জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহানারা পারভীন শিল্পী। তিনি বলেন, দুর্যোগে নারীদের সমস্যাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তা প্রতিকার করতে হবে। কারণ আমরা এমন সমাজ ও পরিবেশ চাই যেখানে নারী-পুরুষের অবাধ চলাচল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। বরিশাল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, দুর্যোগের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। অঞ্চলভেদে দুর্যোগের পার্থক্যও আছে। সেটা বুঝে সেই অুনযায়ী আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে। এজন্য আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দুর্যোগে নারীর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কিন্তু দুর্যোগ মোকাবিলায় নারীর প্রতি বৈষম্যের মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া হয় না। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নারীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো বিশেষ বিবেচনায় রাখা উচিত।
এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক আবু সৈয়দ মোহাম্মদ হাশিম। এসময় তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ নারীর প্রতি হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধে সকলকে একজোট হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় পর্যায়ের আলোচনায় এই বিষয়গুলো নিয়ে আসতে হবে। কারণ নারীর নিরাপত্তা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নারী-পুরুষ সমান সুবিধা পাবে। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোতেও নারীদের যুক্ত করতে হবে। এছাড়া দুর্যোগে নারী ও কন্যা শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তাই নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নারীদেরও সচেতন হতে হবে বলেন আবু সৈয়দ মোহাম্মদ হাশিম।’
দুর্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এবং সহিংসতার শিকার নারীর সুরক্ষার লক্ষ্যে ইউএনএফপি-এর সহায়তায় ‘দুর্যোগকালীন লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ’ বিষয়ক সিরিজ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে একশনএইড বাংলাদেশ। সরকার ঘোষিত বাংলাদেশের দুর্যোগপ্রবন ২২টি জেলায় কর্মরত বেসরকারি সংগঠনের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কর্মীদের নিয়ে প্রশিক্ষণগুলোর আয়োজন করা হবে। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী কিভাবে দুর্যোগের সময় নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা যায় সেই বিষয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের এবং কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর ২০১৮ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পটুয়াখালি, ভোলা এবং বরগুনা এই চারটি জেলার অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে প্রথম প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। আভাস, জাগো নারী ও সুশীলনসহ ১৪ প্রতিষ্ঠানের ২৪জন ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কর্মী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। বরিশাল শহরে আয়োজিত এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মধ্য দিয়েই এই আয়োজনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। পরবর্তীতে চলতি বছরেই ধারাবাহিকভাবে আরো ৪টি জায়গায় এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।
Leave a Reply