দখিনের খবর ডেক্স ॥ বর্ষা শেষে শরৎও বিদায়ের পথে। এই আশ্বিন মাসে কার্যত দাবদাহ চলছে ঢাকাসহ সারা দেশে। তবে বর্তমান অবস্থা আর বেশি দিন চলবে না। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে তাপমাত্রা কমে আসবে। এরপর শুরু হবে শীতের আবহ। আশ্বিনের মাঝামাঝিতে রোদের এমন তীব্র প্রখরতাকে আবহাওয়ার পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক।
মঙ্গলবার এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘আমাদের দেশ ষড়ঋতুর দেশ। কিন্তু আবহাওয়া বিভাগ হিসাব করে চারটি ঋতু হিসেবে। আবহাওয়া অফিসের হিসাবে জুন-জুলাই আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই চার মাস বর্ষাকাল। এবার জুন-জুলাই স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে, কিন্তু আগস্ট-সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে এই সময়ে গরম বেশি অনুভুত হচ্ছে।
আবহাওয়ার এই বিরূপ আচরণকে কিছুটা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বলছেন নাজমুল হক। বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে কিছুটা শিফটিং হয়। তবে এই বিরূপ আচরণের জন্য জলবায়ুর পরিবর্তন পুরোপুরি দায়ী নয়, কিছুটা দায়ী।’ এই আবহাওয়াবিদ বলেন, আগের বছরগুলোতে বর্ষাকালের শেষ সময়ে তাপমাত্রা পড়তির দিকে ছিল। তবে এবারের তাপমাত্রা কিছুটা বেশি।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কয়েক দিন ধরে দেশের প্রায় সব জেলায় তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। আজ যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
এবারের আশ্বিনে তাপমাত্রা কেন এত বেশি- এমন প্রশ্নে এ কে এম নাজমুল হক বলেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর— এই সময়কে ধরা হয় বর্ষাকাল হিসেবে। কিন্তু জুন-জুলাইয়ে স্বাভাবিক বৃষ্টি হলেও সেপ্টেম্বর জুড়ে বৃষ্টি তেমন একটা হয়নি। স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৩ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে সেপ্টেম্বরে। তা ছাড়া গত মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ তৈরি হলেও তা বাংলাদেশে না এসে ভারতের দিকে চলে গেছে। এটিও কম বৃষ্টি হওয়ার একটি কারণ, যার প্রভাব পড়ে তাপমাত্রায়। এবার বর্ষা মৌসুমটা আগেভাগে চলে এসেছিল জানিয়ে নাজমুল হক বলেন, মার্চ থেকে দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় রোদের তীব্রতা বেড়েছে। আগামী দুই দিন তাপমাত্রা এই অবস্থায় থাকবে, তারপর থেকে কমবে।
আবহাওয়া অফিসের ২৪ ঘণ্টার প্রাত্যহিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় দেখা যায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বার্ধিতাংশ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
Leave a Reply