দখিনের খবর ডেস্ক ॥ ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পূর্ব বাংলার বাংলা ভাষাভাষী ৪ কোটি ৪০ লাখ জনগণ পাকিস্তান অধিরাজ্যের অংশ হয়ে যায়। পাকিস্তানের সরকার, প্রসাশন, সামরিক বাহিনীতে পাকিস্তানের পশ্চিম প্রান্তের আধিপত্য দেখা দেয়। করাচিতে জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে শুধুমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা এবং স্কুল ও মিডিয়াতে ব্যবহার করার প্রস্তাব করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব প্রান্তে এর প্রতিবাদ দেখা দেয়। ঢাকায় ছাত্ররা তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাসেমের নেতৃত্বে র্যালি বের করে। বৈঠকে বাংলাকে পাকিস্তানের একটি সরকারি ভাষা এবং পূর্ব বাংলার শিক্ষার মাধ্যম করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে, পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন অনুমোদিত বিষয় তালিকা থেকে বাংলাকে বাদ দেয় এবং একই সঙ্গে মুদ্রার নোট এবং স্ট্যাম্প থেকে বাংলা মুছে ফেলা হয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী ফজলুর রহমান উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। এতে বাঙালি জনগণ বিক্ষুব্ধ হয় এবং ছাত্রদের একটি বড় অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাকে একটি সরকারী ভাষা করার দাবিতে ১৯৪৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জমায়েত হয়। এজন্য ছাত্ররা ঢাকায় মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। ঢাকায় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের হিসেবে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক ছিল বাঙালী, যারা মোট নাগরিকের প্রায় ৫৪%। ঐ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) শুধুমাত্র উর্দুকে জাতীয় ভাষা হিসেবে ঘোষণার প্রতিবাদে বাঙালী ছাত্ররা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। সকাল নয়টায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হতে শুরু করে। সশস্ত্র পুলিশ বেষ্টিত ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সোয়া এগারোটার দিকে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় গেটে জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভাঙার চেষ্টা করে। ছাত্রদের একটি দল ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে দৌড় দেয় এবং বাকিরা পুলিশ পরিবেষ্টিত ক্যাম্পাসে মিছিল করে। উপাচার্য পুলিশকে গুলি চালানো বন্ধ করতে এবং ছাত্রদেরকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার আদেশ দেন। ছাত্রদের চলে যাবার সময় পুলিশ ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের জন্য কিছু ছাত্রকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সংবাদ পেয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা পূর্ব বাংলা গণপরিষদ অবরোধ করে সেখানে তাদের প্রস্তাব উপস্থাপনের দাবি জানায়। ছাত্রদের একটি দল বিল্ডিঙের মধ্যে দ্রুত ঢোকার চেষ্টাকালে পুলিশ গুলি চালায় এবং তাতে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউর সহ অনেক ছাত্র নিহত হয়। হত্যাকাণ্ডের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সারা শহর জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট, অফিস ও গনপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ধর্মঘট শুরু হয়। আইনসভায়, মনোরঞ্জন ধর, বসন্তকুমার দাস, শামসুদ্দিন আহমেদ এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সহ ছয় বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনকে আহত ছাত্রদের দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার দাবি জানান এবং শোকের চিহ্ন হিসেবে গণপরিষদ মুলতবির দাবি করেন। মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, শরফুদ্দীন আহমেদ, শামসুদ্দীন আহমেদ খন্দকার এবং মশিউদ্দিন আহমেদ সহ সরকারি দলের কিছু সদস্য সমর্থন দেন। তবে নুরুল আমিন এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
Leave a Reply