কাজী সাঈদ ॥ বরিশাল-১ আসনে বিএনপি দলীয় ধানের শীষের প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনের গ্রামের বাড়ীতে পুলিশ ও বিজিবি যৌথ অভিযান চালিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এ যৌথ অভিযানে বিএনপির অন্তত ২০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার শরিকল গ্রামের এ বাড়িতে জহির উদ্দিন স্বপন তখন অবস্থান করছিলেন। তার সঙ্গে থাকা ঘুমন্ত নেতাকর্মীদের আটক করে গৌরনদী থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। জহির উদ্দিন স্বপন গত ১২ ডিসেম্বর থেকে এ বাড়িতে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য অবস্থান করছেন। জহির উদ্দিন স্বপন জানান, তার বাড়ীতে নির্বাচন পরিচালনার কাজে সংশ্লিষ্ট প্রায় ২০ নেতাকর্মীকে কোনো ধরনের মামলা ছাড়াই গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এরা সবাই ঐ আসনের বাসিন্দা ও ভোটার। রাত দেড়টা থেকে প্রায় দুই ঘন্টা যাবৎ বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি জহির উদ্দিন স্বপনের গ্রামের বাড়ী ঘিরে রাখে এবং তার বাসভবনসহ বাড়ীর অন্য স্বজনদের ঘরের দরজায় বেপরোয়াভাবে ধাক্কাধাক্কি করে দরজা খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশের এ অভিযানের সময়ে জহির উদ্দিন স্বপন টেলিফোনে গৌরনদী থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেন। একজন সাবেক সংসদ সদস্য ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীর বাড়ীতে নির্বাচনের মাত্র দুইদিন আগে গভীর রাতে পুলিশি অভিযানকে উদ্দেশ্যেপ্রনোদিত বলে অভিযোগ করেন। ওসি গোলাম সরোয়ারের অনুরোধে অবশেষে জহির উদ্দিন স্বপন দরজা খুলে দিতে বলেন। পরে ওসির নেতৃত্বে রাত তিনটা থেকে প্রায় ৪টা পর্যন্ত বাসা তল্লাশি করে পুলিশ। তল্লাশি চলাকালে বিবিসির কাদির কল্লোল, এএফপি ও প্রথম আলো সহ বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা টেলিফোনের মাধ্যমে বিস্তারিত খবর নিচ্ছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর বিশাল মিছিলে নিয়ে নিজ বাড়ীতে প্রবেশ করার পর থেকেই বাস্তবিক অর্থে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের ক্যাডার ও প্রশাসনের নানামুখী তৎপরতায় অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন জহির উদ্দিন স্বপন। পুরো নির্বাচনের সময়কালে তাকে একটিও নির্বাচনী প্রচারসভা করতে দেয়া হয়নি। এ নিয়ে নানা সময়ে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেও নূন্যতম সহযোগিতা পাননি বলে জানান বিএনপির এই প্রার্থী। তবে তিনি স্বীকার করেন, প্রচলিত প্রচার কার্যক্রমকে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনযন্ত্র দ্বারা ব্যাপকভাবে বাধার সম্মুখীন হওয়ায় তিনি প্রচারের মাধ্যম হিসেবে প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্টনিক মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল মেসেজিং ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে লাইভ বক্তব্যে প্রদান করে বিকল্প মাধ্যমকে সর্বাত্মক ব্যবহার করেন। এতে তিনি সফলতাও পেয়েছেন বলে মনে করেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে সত্যিকার অর্থে একজন আধুনিক রাজনৈতিক নেতৃত্বকে তার নেতাকর্মীদের সঙ্গে খুব বেশিসময়ের জন্য দূরত্ব তৈরি করে রাখা সম্ভব নয়। পুরো নির্বাচনী এলাকার ১১৭টি ভোটকেন্দ্রের কেন্দ্রভিত্তিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন যন্ত্রের উদ্দেশ্যমূলক অবরুদ্ধ অবস্থাকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন বলে মনে করেন। নির্বাচনের মাত্র দুদিন আগে গভীর রাতে পুলিশ ও বিজিবির যৌথ অভিযানকে লাগাতারভাবে নির্বাচনী প্রচারে বাধা দিয়েও নির্বাচনে তার বিজয়কে ঠেকাতে না পারার আতংকের প্রতিক্রিয়া বলে ধারনা করছেন। জহির উদ্দিন স্বপন বলেন,একটি রাজনৈতিক দল কতোটা দেউলিয়া ও গণবিচ্ছিন্ন হলে একজন প্রার্থীকে একটিমাত্র জনসভার সুযোগ না দিয়েও নিশ্চিত পরাজয়ের আতংক ভর করলেই কেবলমাত্র তার শারীরীক উপস্থিতিকেও মেনে নিতে অস্বস্তিবোধ করে। গভীর রাতে বিনা ওয়ারেন্টে পুলিশি অভিযান ও নীরিহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার তারই প্রমাণ। জহির উদ্দিন স্বপন অবিলম্বে তার বাড়ী থেকে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীসহ গত কয়েকদিন যাবৎ গ্রেপ্তারকরা বিএনপির সকল নেতাকর্মীর অবিলম্বে মুক্তি দাবী করেন। তিনি নেতা-কর্মীদের যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য্য ও সাহস সহকারে অতিক্রমের মাধ্যমে আগামিকাল সবাইকে সকাল সকাল দলে দলে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে, ধানের শীঁষে ভোট দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে তরান্বিত করার আহ্বান জানান।
Leave a Reply