দখিনের খবর ডেস্ক ॥ সার উৎপাদন ও আমদানিতে দেশে কোন সঙ্কট নেই। অথচ অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে সারের দাম। আর কৃষকের স্বার্থে সরকার সার নিয়ে যে ভর্তুকির ব্যবস্থা বলবৎ রেখেছে ওই অর্থ গিলে খাচ্ছে ডিলারদের একটি সিন্ডিকেট। তাছাড়া আমদানি পর্যায়েও রয়েছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। ওসব বিষয় নিয়ে দেশে সরকারের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। দেশে সব ধরনের সারের চাহিদা বর্তমানে ৫০ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ ২০ লাখ টন। চাহিদার অবশিষ্ট সার আমদানি করে মেটাতে হয়। একটি সিন্ডিকেট ওই আমদানি পর্যায়ে একচেটিয়া আধিপত্য সৃষ্টি করে রেখেছে। ওই সিন্ডিকেট সদস্যরা উচ্চমূল্যের দর দিয়ে সার আমদানি করছে। তাছাড়া সরকার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ৫ হাজার ডিলার নিয়োগ দিয়ে রেখেছে। সেক্ষেত্রে কৃষক পর্যায়ে ভর্তুকির যে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া আছে, কৃষকরা তা পাচ্ছে না। ফলে উচ্চমূল্যে সার কিনে কৃষকরা চাষাবাদ করতে বাধ্য হচ্ছে। তাতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত। অভিযো রয়েছে, ডিলারদের বড় একটি অংশই সরকারি ভর্তুকির টাকা নিজেরা হাতিয়ে নিচ্ছে। কৃষক এবং সার খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে মূলত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চাষাবাদের মূল সময় হিসেবে বিবেচিত। তারপরও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হয়ে থাকে। আর ওই চাষাবাদের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হচ্ছে সার। দেশে মূলত ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমএপিই উল্লেখযোগ্য হারে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেহেতু চাহিদার মাত্র ২০ লাখ টন দেশে সরকারি কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হয়, ফলে অবশিষ্ট সার আমদানির ওপরই নির্ভরশীল। আর আমদানি পর্যায়ে রয়েছে নির্ধারিত আমদানিকারক। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ আমদানিকারকের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মূলত তারাই সারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে। আমদানি পর্যায়ে উচ্চমূল্যের দর দিয়ে তারা সারের মূল্য নির্ধারণ করতে বাধ্য করে। তারপর ডিলার পর্যায়ে সরবরাহের ক্ষেত্রে যে ভর্তুকির ব্যবস্থা প্রবর্তন করা আছে, সেক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের কারসাজি রয়েছে। অঞ্চলভিত্তিক ডিলাররা সার না পৌঁছিয়ে ভর্তুকির অর্থ হাতিয়ে তা ডিলার সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে বিক্রি করে নিচ্ছে। যে কারণে সারের বাজার মূল্য এখন চড়া। ফলে সরকার কৃষকের স্বার্থে সারের ওপর যে বিপুল অঙ্কের অর্থের ভর্তুকি দিচ্ছে তার কোন সুফল কৃষক পাচ্ছে না। সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সরকার প্রতিবছর সারের চাহিদা নিরূপণ করে থাকে। ওই অনুযায়ী দেশীয় উৎপাদন ও আমদানির ব্যবস্থা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে দেশে সারের কোনো সঙ্কট নেই। অথচ সরবরাহ পর্যায়ে মূল্যের কারসাজি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে আছে। বিভিন্ন ধরনের সারের বস্তাপ্রতি মূল্য সহনীয় পর্যায়ের ওপরে রয়েছে। ফলে সঙ্কট না থাকলেও কৃষককে সারের জন্য বাড়তি মূল্য গুনতে হচ্ছে। এদিকে এসব বিষয় আমদানিকারক ও ডিলারদের দাবি, কতিপয় আমদানিকারকের উচ্চমূল্যের দর প্রদান এবং ডিলারদের ভর্তুকির অর্থ পকেটস্থ করার বিষয়টি নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তার ব্যত্যয় ঘটলে সারের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বর্তমানে সারের বাড়তি মূল্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
Leave a Reply