দখিনের খবর ডেস্ক ॥ বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার সেনাবাহিনীকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছেন না। ভোটের এক দিন আগে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেছেন, সব বাধা পেরিয়ে দেশের মানুষ রবিবার বিএনপির ধানের শীষের পক্ষে ‘ভোট বিপ¬ব’ করবে বলে তার বিশ্বাস। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে। বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, প্রচারে তাদের সমান সুযোগ দেওয়া হয়নি, ‘ক্ষমতাসীনদের হামলা-ভাঙচুর ও পুলিশি হয়রানি’ মোকাবেলা করে তাদের প্রচার চালাতে হয়েছে। রিজভী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষের প্রার্থীদের মিছিলে বাধা দিয়েছে। বিএনপির নির্বাচনী এজেন্ট, কর্মী ও সমর্থকদের এলাকাছাড়া করা হচ্ছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গ্রামে-গ্রামে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। সর্বত্র এক ভীতিকর অবস্থা বিদ্যমান। এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে মাঠে নামিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তাদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সবই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ইশারায় এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের তত্ত্বাবধানে। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট সামনে রেখে গত ২৪ ডিসেম্বর দেশের ৩৮৯টি উপজেলায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশনা অনুযায়ী টহল ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করবে তারা। বিএনপি ও তাদের ঐক্যফ্রন্ট ভোটের মাঠে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার দাবি জানালেও আইনে সেই সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটে পরাজয় আঁচ করতে পেরে বিএনপি ‘নাশকতার পরিকল্পনা’ করছে বলে যে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার করেছেন, তাকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যায়িত করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে একটি উন্নতমানের মিথ্যা প্রডাকশন কেন্দ্র, এটা সর্বজনবিদিত। এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই। বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলা করেছে কে? বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আঘাত করে রক্তাক্ত করেছে কে? ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনকে গুলি করেছে কে? শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে রক্তাক্ত করেছে কে? রোমানা মাহমুদকে গুলি করেছে কে? হাবিবুর রহমান হাবিবকে আপনি ভালোভাবে চিনেন, তাকে হত্যা করার জন্য তার শরীরে ছুরি ঢুকিয়েছে কে?’ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আফরোজা আব্বাস, হাসিনা আহমেদ, হাফিজ ইব্রাহিম, সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা, মাহমুদুর রহমান মান্না, সালাহউদ্দিন আহমেদ, জহিরউদ্দিন স্বপন, শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকসহ ধানের শীষের প্রার্থীদের প্রচার মিছিলে ও বাড়িতে হামলার জন্যও ক্ষমতাসীনদের দায়ী করেন রিজভী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা আপনার কাছ থেকে জাতি জানতে চায়। জেলায় জেলায় বেপরোয়া গ্রেফতার অভিযানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িছাড়া করা হচ্ছে। আপনি বলছেন বিএনপি নাশকতা করছে। নাশকতাকারীদের ট্রেনিং সেন্টার তো আওয়ামী লীগেই বিদ্যমান।’ নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষের প্রার্থীদের বাড়িতে আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনীর ‘তল¬াশি, গ্রেফতার, হয়রানির’ একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিএনপি নেতা রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট গ্রেফতার ১০ হাজার ৩২৯ জন, গায়েবী ও মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৮৪৪টি, মোট হামলার সংখ্যা ২ হাজার ৮৯৬টি, মোট আহতের সংখ্যা ১৩ হাজার ২৫২ জন এবং মোট হত্যা করা হয়েছে ৯ জনকে।’ অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ ও শাহজাহান মিয়া সম্রাট সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply