দখিনের খবর ডেস্ক ॥ ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি (এমআরএ) এনজিও ঋণের সুদহার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্য উচ্চ পর্যায়ের ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারণ গত এক বছর যাবৎ ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে অর্থাৎ ৯ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদহার এখনো ১৮ শতাংশের ওপরে রয়েছে। ফলে এনজিও থেকে উদ্যোক্তারা উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে গিয়ে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে। বর্তমানে শুধুমাত্র ক্রেডিট কার্ড ছাড়া আর প্রায় সব ঋণের গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে কম সুদে বিনিয়োগ পাচ্ছে। তাতে ব্যবসায়ের ব্যয় কমে গেছে। কিন্তু একই উদ্যোক্তা যখন এমআরএ লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিচ্ছে, তখন প্রতি ১০০ টাকার জন্য ১৮ থেকে ৩০ টাকা ব্যয় করছে। অর্থাৎ ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ শতাংশ সুদে উদ্যোক্তারা ওসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ নিচ্ছে। তাতে তাদের একদিকে যেমন ব্যবসা-ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি একই বাজারে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। অনেকেই ব্যবসায়ে লোকসান গুনছে। এমনি পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমআরএ পক্ষ থেকে এনজিও ঋণের সুদহার কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এমআরএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মাঠ পর্যায়ে এমআরএর নিবন্ধন নিয়ে ৮শ প্রতিষ্ঠান বা এনজিও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে। তার মধ্যে ২০২টি প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) থেকে অর্থায়ন পায়। ওসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার কমানো হয়েছে। বাকি ৬শ প্রতিষ্ঠানের সুদের হারও এমআরএ ২৪ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে। এনজিও ঋণের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য ইতিমধ্যে এমআরএ থেকে ১০ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এমআরএর নির্বাহী চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়নকারী সংস্থা পিকেএসএফ, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা ক্রেডিট ডেভেলপমেন্ট ফোরামসহ (সিডিএফ) কয়েকটি ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠান তাতে সদস্য হিসেবে রয়েছে। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে এমআরএ। সূত্র জানায়, ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুদের তুলনায় ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার অনেক বেশি। ওই খাতে সুদের হার কমানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে নানামুখী উদ্যোগ চলছে। তাতে অবশ্য সুদের হার কিছুটা কমেছে। তবে আরো কমানো প্রয়োজন। সুদের হার না কমানোতে এ খাতের ঋণ গ্রহীতারা ইতিবাচক ফল পাচ্ছে না। বিশেষ করে কুটির, অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে সুদের হার কমানো জরুরি। তবে ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে আপত্তি করা হচ্ছে। তাদের মতে, সুদের হার কমানো হলে আয় কমে যাবে। তখন প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকিতে পড়বে। সূত্র আরো জানায়, ক্ষুদ্রঋণ খাতে খেলাপির হার খুবই কম। ফলে সুদের হার কমালে কোনো ঝুঁকি আসবে না। আর ঋণের সুদের হার কমাতে ছোট, বড় ও মাঝারি ধরনের ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন আয়-ব্যয় ও তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ পর্যালোচনা করে দেখা হবে। তার মধ্যে কোন কোন খাতে ব্যয় কমানো ও আয় বাড়ানো সম্ভব সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে। একই সাথে তহবিল ব্যবস্থা ব্যয় কমিয়ে ঋণের সুদের হার কমানোরও কৌশল নির্ধারণ করা হবে। সেজন্য কমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশও করবে। কমিটি পর্ষদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। তবে সেজন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি। এদিকে করোনার সময়ে ক্ষুদ্রঋণ খাতে বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে। ওই তহবিল থেকে মাঠ পর্যায়ে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। ওই আলোকে এনজিও খাতেও কিভাবে ঋণের সুদের হার কমানো যায় সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে কম সুদের একটি তহবিল গঠন করে তা থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে তহবিল জোগান দেয়া হবে।
Leave a Reply