স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণমাধ্যমের নাম, নকল স্টীকার, ভূয়া লোগো ইত্যাদি ব্যবহার করে বিভিন্ন অপকর্ম বর্তমান বরিশাল নগরীর হরহামেশা চিত্র। তবে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষের কাছে এসব ব্যাপার থাকে অজানা। অনেক সময় প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্রকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অগোচরে নকল স্টীকার ব্যবহার করে অপরাধ করার চেষ্টা করে একদল দুষ্কৃতকারী। সম্প্রতি নগরীর কাশিপুর থেকে তিনজন মাদককারবারিকে পুলিশ কর্তৃক আটকের পর এমন একটি ঘটনা সামনে আসে। স্থানীয় গণমাধ্যমের বিশিষ্টজনেরা এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ সংশ্লিষ্টদের এখনই সোচ্চার হবার আহবান জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ড এলাকার কাশিপুর বাজার থেকে তিন মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের ব্যবহৃত একটি পরিত্যক্ত প্রাইভেটকার আটক করে পুলিশ। আটকৃত প্রাইভেটকারটিতে লাগানো স্থানীয় পত্রিকার নকল স্টিকার নিয়ে এক ধরণের ধোঁয়াশাপূর্ণ সংবাদ পরিবেশন শুরু করে ক্ষুদ্র একটি মহল। তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রচার শুরু করে যে, বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক আজকের বার্তা’র স্টিকার সংবলিত গাড়িটি মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু গত দুদিন যাবৎ বিশেষ অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে আসল চিত্র। গত মঙ্গলবার মাদক বিরোধী অভিযানে অংশ নেয়া বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত সেদিন বিকালে নগরীর ২৯নং ওয়ার্ড এলাকার কাশীপুর বাজার সংলগ্ন কাজী গোলাম সারোয়ার ওরফে তোতা মিয়ার মালিকানাধীন একটি ভবনে অভিযান চালায় তারা। এসময় সেখান থেকে ২৩ বোতল ফেন্সিডিল, ২০ ক্যান বিয়ার এবং ৭৫০ মিলির এক বোতল বিদেশী মদ, ভবনের ভেতরে বিভিন্ন কক্ষ থেকে বিপুল সংখ্যক ফেন্সিডিলের খালি বোতল, পুড়িয়ে ফেলা বোতল, মাদক সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। যেগুলোর বাজার মূল্য প্রায় লক্ষাধিক টাকা’। তিনি আরো জানান, এসব মাদকদ্রব্যের পাশাপাশি ভবনটির গ্যারেজ থেকে স্থানীয় পত্রিকার নকল স্টিকার লাগানো সিলভার রঙের একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো – গ ১৯২৭৩৮), ২টি মোটরসাইকেল (হোন্ডা ট্রিগার, এপাচি আরটিআর) তিনজনকে আটক করা হয়। ২টি মোটরসাইকেলের সিটের নিচ থেকে ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলো- কাজী গোলাম সরোয়ার এর দুই পুত্র কাজী গোলাম কিবরিয়া মুন্না ও কাজী সজল এবং মোঃ কাঞ্চন আলীর পুত্র মোঃ আজিজুর রহমান বাবুল। মাদকের সঙ্গে জড়িত এসব দুষ্কৃতকারীরা নিজেদের অপকর্মের ঢাল হিসেবে পত্রিকার স্টিকার সংবলিত গাড়ি ব্যবহার করতেন বলে ধারণা এই পুলিশ কর্মকর্তার। অপর একটি অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘মঙ্গলবার আটককৃতদের কাছ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার সকাল ১০টায় কাশিপুর এলাকায় আরও একটি অভিযান চালানো হয়।এসময় কাজী গোলাম কিবরিয়া মুন্নার মালিকানাধীন মিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ থেকে থেকে একটি পুরাতন বাজারের ব্যাগে ১৫ বোতল ফেন্সিডিল পাওয়া যায়’। এগুলোর অবৈধ বাজার মূল্য ৪৫ হাজার টাকা হতে পারে বলে মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ধারা ৩৬ ও ৪০ নং অনুযায়ী একটি মামলা (মামলা নং:১৫, ১০/০৩/২০২১) দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার রাতের অভিযানের ঘটনায় আটক তিনজনসহ মোট চারজনকে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার পলাতক আসামি প্রাইভেট কারের মালিক কাশীপুরের কাজী মোজাম্মেল হক মঞ্জুকে চার নম্বর আসামি করা হয়েছে। বুধবার সকালে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আটক তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সরেজমিনের বিশেষ অনুসন্ধানে আটক গাড়িটির ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে দৈনিক আজকের বার্তাসহ বরিশালের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিনিধিরা। তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আটক গাড়িটি প্রায় পরিত্যক্ত এবং অকেজো হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ঘটনাস্থলে পরে ছিল। এই গাড়িটি দ্বারা যাত্রী কিংবা মালামাল পরিবহন এক প্রকার অসম্ভব। অন্যদিকে গাড়িটিতে যে স্টিকার লাগানো আছে তা যেকোনো কম্পিউটার কম্পোজের দোকান থেকে জরাজীর্ণ ও ঝলসানো সাদামাটাভাবে প্রিন্ট করা। পত্রিকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সরবরাহকৃত স্টিকার আর উক্ত গাড়িটিতে লাগানো নকল স্টিকারের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে উক্ত ঘটনায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তাদের সঙ্গে দৈনিক আজকের বার্তা পত্রিকার কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা বা পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয়ও নেই। ধারণা করা হচ্ছে, নিজেদের মাদক ব্যবসা মসৃণভাবে পরিচালনা করতে দৈনিক আজকের বার্তা পত্রিকা কর্তৃপক্ষের অগোচরে এই গোষ্ঠি পত্রিকার নাম সংবলিত নকল স্টিকার ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। একইসঙ্গে আটক আসামিদের নিয়ে এক ধরণের নাটকের আশ্রয় নেবার চেষ্টা করেছে স্থানীয় কয়েকটি ভুঁইফোড় নিবন্ধনহীন অনলাইন পত্রিকা। এ বিষয়ে আজকের বার্তা কর্তৃপক্ষের কোেনা বক্তব্য ছাড়াই সংবাদটি প্রকাশ করেছে। দৈনিক আজকের বার্তা পত্রিকার গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আটক পরিত্যক্ত গাড়িটিতে লাগানো নকল স্টিকারকে কেন্দ্র করে ধোঁয়াশাপূর্ণ সংবাদ প্রচার করা হয়। কিন্তু ঐ নকল স্টিকার কম্পিউটার কম্পোজের দোকান থেকে তৈরি করা এবং আজকের বার্তা পত্রিকার আসল ডিজিটাল স্টিকার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ ব্যাপারে দৈনিক আজকের বার্তার সম্পাদক কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল জানান, এই ঘটনাটি সম্পর্কে আমরা জেনেছি, অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছি, এই ধরনের সাদামাটা আজকের বার্তার নামাংকিত একটি নকল স্টীকার পরিত্যক্ত সেই গাড়িতে সাটিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই এই জঘন্য কাজটি করেছে। এতে করে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুণ্ন করার একটি অপচেষ্টা মাত্র। পত্রিকার নাম ব্যবহার করে এধরনের হীন কর্মকাণ্ড বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও তৎপর হবে বলে আমরা আশা করছি।
Leave a Reply