প্রতিনিধি বাউফল ॥ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীন শিক্ষার্থীদের আর্থিক অনুদান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পটুয়াখালী বাউফলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যয়ন বাবদ হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে শিক্ষার্থীরা নিতে পারছেনা প্রত্যয়ন। অপরদিকে ওয়েবসাইটিতে আবেদনের সময় সীমা শেষ হওয়ার পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন চলছে প্রত্যয়ন দেয়ার হিড়িক। বিষয়টি নিয়ে নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। িি.িংযবফ.মড়ন.নফ ওয়েব সাইট থেকে জানাগেছে, সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারী থেকে একটি আর্থিক অনুদানের প্রজ্ঞাপন জারী করেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়। সে অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ অনুদান প্রাপ্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। দ্বিতীয় ধাপে এ আবেদনের সময় সীমা বাড়ানো হয় ৭ মার্চ পর্যন্ত। করনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা আবেদন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকায় প্রথমদিকে কোন হিড়িক ছিলনা। বিষয়টি যখন অতি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পরে তখন সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। কৌশল অবলম্বন করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কম্পিউটারের দোকানগুলো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রত্যয়ন বাবদ আদায় করে নেন ১শত টাকা থেকে ১শত ৫০টাকা আর কম্পিউটার দোকানগুলো আবেদনের নাম করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ১শত টাকা থেকে ২শত টাকা। অনলাইনের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্র্থীকে প্রথমে ওয়েবসাইটে ঢুকে মোবাইল নম্বর ও শিক্ষার্থীর নাম দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। নিবন্ধনের পরে ৬ সংখ্যার একটি গোপন বার্তা আসে। পুনরাই মোবাইল নম্বর ও ৬ সংখ্যার বার্তাটি দিয়ে লগিং করলে আবেদনের জন্য সাইডে প্রবেশ করা যায়। নিয়ম অনুযায়ী সকল তথ্য দেওয়ার পরে আবেদন প্রেরনের জন্য সাবমিট করতে হয়। যথাযথ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে আবেদন প্রেরণের পরে ২৭ থেকে ত্রিশ সংখ্যার একটি ট্রাকিং আইডি দেয়া হয়। ওই ট্রাকিং আইডি পেলেই একজন শিক্ষার্থীর আবেদন নিশ্চিত হয়। সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে এখন নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু রয়েছে তবে তথ্য হালনাগাদ কিংবা ট্রাকিং আইডি পাচ্ছেনা আবেদনকারীরা। সুযোগ বুঝে অসাধু শিক্ষক ও কম্পিউটার ব্যবসায়ীরা কৌশলে অনলাইনের পেইজটির উপরে একটি আবেদন লিখে প্রিন্ট করে শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে টাকা আদায় করে নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বাউফল সরকারি কলেজ, বাউফল আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়, বাউফল ছালেহিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজ, নাজিরপুর ছোট ডালিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শহিদ সেলিম স্মৃতি মাদ্রাসা, কনকদিয়া, নওমালা, বগা, আধাবাড়িয়া, কেশবপুর ও কালিশুরী ও সদর ইউনিয়ন বাউফলের স্কুল কলেজ মাদ্রাসা এবং আড়ালে অবডালে থাকা খুপরি ঘরের অধিকাংশ কম্পিউটার দোকানীরা। নুরাইনপুর এলাকার কনিকা আক্তার লিমা বাউফল সরকারি কলেজের স্নাতক শ্রেণীর বিএসসি পাস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের নিয়মিত শিক্ষার্থী। স্বামী ঢাকায় একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী করেন। সরকারের এ আর্থিক সাহায্য পেলে প্রাইভেট পড়বেন ও কিছু বই কিনবেন। কিন্তু ,দীর্ঘদিন পরে বাউফল কলেজের অধ্যক্ষ গতকাল ১৬ মার্চ তাকে প্রত্যয়ন পত্র দেন। ওই প্রত্যয়ন পত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ শিক্ষায় মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইড বন্ধ পেয়ে হতাশা গ্রস্থ হয়ে পরেন। নাজিরপুরের রিনা বেগমের কন্যা মানসুরা বাউফল সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। তার কন্যার জন্যে ফরম পুরণ করতে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের প্রত্যয়ন নিতে ৪ দিন ঘুরে মঙ্গলবার সকালে ১শত টাকার দেওয়ার পরে কলেজ অধ্যক্ষের প্রত্যয়ন হাতে পান। পরে কম্পিউটারের দোকানে গিয়েও ওয়েবসাইড বন্ধ থাকায় আবেদনটি করতে পারেননি। মুকুল আক্তার বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ আবেদনের সময় নেই তাকে বললে সে ৫ শত টাকা খরচ করে এ ঘোরাঘোরি করতেন না। লামিয়া জানান, বাউফল ছালেহিয়া ফাজিল মাদ্রাসার স্যারেরা আমাদের কাছ থেকে ১শত টাকা, জন্মনিবন্ধন ও ছবি রেখেছেন। আমাদের মাদ্রাসার কয়েকশত ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা ও কাগজ নিয়েছে। বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী শান্তা জানায়, আমাদের স্কুল থেকে আবেদনের জন্য প্রত্যয়ন বাবদ (১৭ মার্চ) আমি সহ শত শত ছাত্রীদের কাছ থেকে রেখেছে স্কুলের কেরানি স্যারে! এ বিষয়ে বাউফল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বশার তালুকদার সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান প্রধান জানান, শিক্ষার্থীর ন্যায্য অধিকার, প্রতিষ্ঠান থেকে একটি প্রত্যয়ন পাবার। সেটা যে কোন প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে পারে। তবে সকল প্রতিষ্ঠানই প্রত্যয়নের জন্য টাকা নিচ্ছে। এটা কাগজ কালির খরচ মাত্র। বাউফলের ইউএনও জাকির হোসেন জানান, আমি মাধ্যমিকের সাথে কথা বলছি। যদি কোন সরকারি এবং বেসরকারি এমপিও ভূক্ত ও ননএমপিও ভূক্ত প্রতিষ্ঠান অনিয়মের সাথে জড়িত থাকেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply