উজিরপুর প্রতিনিধি ॥ সম্পত্তি বুঝে পেতে ও জমির দখল ঠেকাতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে দীর্ঘদিন ধরে আসামিদের সন্ত্রাসী হামলার শঙ্কায় ভুগছেন বরিশালের উজিরপুরের হতদরিদ্র চার সহোদরসহ তাদের পরিবার। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে প্রতিপক্ষরা অসহায় ওই চার সহোদরকে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছেন। উপজেলার গুঠিয়া ইউপির ভাইটশালি গ্রামের হতদরিদ্র নসিমন চালক এনায়েত হোসেন গংদের সাথে তার চাচা হেলাল উদ্দিন গংদের ওই জমি নিয়ে বিরোধের কারণে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধের উপক্রম দেখা দিয়েছে। একই সাথে অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ তার স্বজনরা মিলে ওই স্কুলের প্রায় ২৪ শতক জমি অবৈধভাবে দখল করে ভোগ করছেন। মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নসিমন চালক এনায়েত, তার ভাই আবুল কালাম, সাখাওয়াত ও জাকিরের সাথে একই গ্রামের হেলাল উদ্দিন গংদের বিরোধ চলে আসছিল। এনায়েতসহ তার ভাইয়েরা অশিক্ষিত এবং আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল থাকায় দীর্ঘদিন ধরে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে প্রতিপক্ষরা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষ হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে তার দুই ছেলেসহ ১৫/২০ জনের একটি গ্রুপ অসহায় এনায়েত গংদের জমি দখল করতে যান। সে সময় স্থানীয়দের তোপের মুখে জমি দখলে ব্যর্থ হন প্রতিপক্ষরা। সেই ঘটনার পরে সম্পত্তির দখল ঠেকাতে ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর হতদরিদ্র এনায়েত হোসেন বাদী হয়ে বিজ্ঞ বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করে। ওই মামলায় প্রতিপক্ষ হেলাল উদ্দিন হাওলাদার, তার ছেলে দুলাল, পনির, ভাইয়ের ছেলে মামুন ও নয়নের নাম উল্লেখসহ ১০ থেকে ১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। সম্প্রতি ওই বিরোধীয় সম্পত্তিতে উভয়পক্ষের প্রবেশ, স্থাপনা নির্মাণসহ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উজিরপুর মডেল থানাকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিপক্ষরা বিরোধীয় জমিতে ফসলের চাষ ও স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে আদালতের দেয়া ওই নিষেধাজ্ঞায় স্থানীয় ভাইটশালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ উভয় পক্ষের বিরোধীয় সম্পত্তির মধ্যে স্কুলের দখলে থাকা জমিও রয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণকাজের বিষয়ে কোন প্রকার আপত্তি নেই বলে উভয়পক্ষ নিশ্চিত করেছেন। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় ওই স্কুলটি স্থাপনের জন্য সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে জড়ানো উভয়পক্ষের পূর্ব ওয়ারিশগনসহ অনেকে মিলে মোট ৩৩ শতক জমি দান করেছেন। এর মধ্যে বর্তমানে স্কুলের দখলে রয়েছে মাত্র ৯ শতক জমি। বাকি ২৪ শতক জমি ওই স্কুলের সভাপতি ও নসিমন চালক এনায়েত হোসেনের প্রতিপক্ষ হেলাল উদ্দিন (৬৮), তার ছেলে দুলাল, পনির, স্থানীয় খোকন, মিলন, শাহাদাত ও বশিরসহ আরও অনেকে অবৈধভাবে দখল করে ভোগ করছেন। এসব বিষয়ে জানতে হেলাল উদ্দিনের সাথে আলাপ করা হলে তিনি এনায়েত হোসেন গংদের জমি দখলের চেষ্টা ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। তবে স্কুলের জমি দখলের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘স্কুলে জমি আমারই দিয়েছি। স্কুলে তো এখন এতো জমি লাগে না, তাই বাকি জমি স্কুলের দাতাপক্ষের লোকজন ভোগ করছেন।’ এদিকে ভুক্তভোগী এনায়েত হোসেন ও তার ভাইয়েরা অভিযোগ করে জানান, প্রতিপক্ষরা নিকটাত্মীয় হয়েও দীর্ঘদিন ধরে তাদের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছে। তাছাড়া প্রতিপক্ষ হেলাল উদ্দিন ওই স্কুলের সভাপতি ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা হওয়ায় তার ছেলেরা প্রভাব খাটিয়ে স্কুলের অধিকাংশ জমিও ভোগ করছেন। ভূমিখেকোদের দখলে থাকা স্কুলের জমি উদ্ধারের পাশাপাশি নিজেরাও হয়রানি থেকে বাঁচতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে জানতে উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল আহসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘হেলাল উদ্দিন যদি আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। পরবর্তীতে আদালত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’
Leave a Reply