বিদেশ ডেস্ক ॥ ফ্যাসিস্ট সরকারের অব্যাহত হত্যাযজ্ঞ ন্যক্কারজনক হামলা, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার হরণের প্রতিবাদে গতকাল দেশব্যাপী জেলা পর্যায়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশ হামলা চালিয়েছে, গুলিবর্ষণ করেছে। নওগাঁয় জেলা বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে ৫০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। পুলিশের গুলিতে নওগাঁ জেলা মহিলাদল নেত্রী কহিনুর ইসলাম মিলি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) বিকেল ৪টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে মিছিলের জন্য বিভিন্ন স্থানে জমায়েত হওয়া বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যাক নেতাকর্মীর ওপর পুলিশ গুলি ও লাঠিচার্জ করে। প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী পুলিশের এই নির্মম আক্রমণে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফ মিয়া, সহসভাপতি সাঈদ সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম নিশাত, জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, রুবেল মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিকুজ্জামান পার্নেল, সদর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নঈমসহ ৪০ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছে। গত ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা পুলিশের প্রহরায় কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যালয় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, পাবনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। রাজশাহী ও নাটোরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ ব্যাপকভাবে বাধা দিয়েছে। পটুয়াখালীতে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির মিছিলে হামলা চালিয়ে তিনজন নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত ও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভোলা জেলায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশি বাধা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশ বাধা দিয়েছে। ঝালকাঠিতে পুলিশ ও র্যাবের নিষেধাজ্ঞায় বিএনপি মিছিল কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। বরগুনায় পুলিশ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে প্রবেশ করে হামলা চালিয়েছে। সেখানে কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি পুলিশ। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিমসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। হবিগঞ্জে গতকাল চার শ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কুষ্টিয়ায় জেলা বিএনপির কার্যালয় পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে এবং জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা ও বাধার কারণে কর্মসূচি পণ্ড ও অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন সিদ্ধিরগঞ্জে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যাপক মামুন, বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম রবি, রাজুসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে ছয়টি বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে। মানিকগঞ্জে গত রাতে বিএনপির ৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ময়মনসিংহে পুলিশ বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ভোর থেকে দলীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখে। ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচিতে আসা নেতাকর্মীদের জমায়েতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের আহত করেছে। নিষেধাজ্ঞা ও হামলার মুখেও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর অভিযোগ, গতকাল দেশব্যাপী মহানগর পর্যায়ে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর মহানগরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ ন্যক্কারজনক হামলা চালায়। চট্টগ্রাম মহানগরীর কাজীর দেউড়িতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়, মহানগর আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, তার পিএস মারুফুল হক চৌধুরী, পাঁচলাইশ থানা বিএনপির সহসভাপতি মো. আলী, মহানগর মহিলাদলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মণি, যুগ্ম সম্পাদক আঁখি সুলতানা, প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদা লিটা, রিনা খানসহ ২০ জন নেতাকর্মীকে আটক এবং পুলিশ গুলিবর্ষণ ও বেধড়ক লাঠিচার্জের মাধ্যমে ৪০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আহত করে। তিনি বলেন, মারাত্মক আহত নেতাকর্মীরা হলেন- নগর যুবদল নেতা তৈয়ব আলী, আনিসুজ্জামান, আব্দুর রহিম, মো. হেলাল, সাহাবুদ্দিন সাবু, শাহেদ তৈমুর, মঞ্জুর আলম, মো. ইলিয়াস প্রমুখ। খুলনা মহানগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশের শেষ মুহূর্তে পুলিশ চতুর্দিক থেকে বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লাঠিচার্জের মাধ্যমে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জ ও হামলায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ নেতাদের গ্রেপ্তার করার পাঁয়তারা চালায়। দীর্ঘক্ষণ নেতাকর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। খুলনা মহানগরীর ৯ জন নেতাকর্মী পুলিশের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হন। ময়মনসিংহ মহানগরীতে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে নেতাকর্মীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। প্রতিবন্ধকতার মুখে নতুন বাজারে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি পালন করে নেতাকর্মীরা ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে পুলিশ হামলা চালিয়ে ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান এফ আই ফারুক, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ওয়াসিম, ছাত্রদল ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখার আহ্বায়ক ইমন চৌধুরী, ময়মনসিংহ দক্ষিণ থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব গোবিন্দ রায়, যুবদল নেতা আলী ও স্বপনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এখানে পুলিশ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদেরকেও আটক করার পাঁয়তারা চালায় এবং হেনস্তা করে। গাজীপুর মহানগরীতে মেট্রো থানা বিএনপির মিছিলে পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালায় ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে, এতে তিনজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সভা-সমাবেশ করা মানুষের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার হলেও ভোটবিহীন সরকার তাদের অনৈতিক ও ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে সভা-সমাবেশে গুলিবর্ষণ, হামলা, মামলা, গ্রেপ্তারসহ দমন, নিপীড়ন চালিয়ে রাজনীতির পথকেই সংকুচিত করে ফেলেছে। গতকাল ও গতকাল বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ন্যক্কারজনক হামলা, পুলিশের গুলিবর্ষণ, নেতাকর্মীদেরকে আহত ও গ্রেপ্তার করার ঘটনার আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গ্রেপ্তারকৃত নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি ও আহতদের সুস্থতা কামনা করছি।
Leave a Reply