গলাচিপা প্রতিনিধি ॥ উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল পাঁচ দিন ধরে জোয়ারের পানিতে দফায় দফায় প্লাবিত হচ্ছে। এর ফলে বিশেষ করে বেড়িবাঁধের বাইরে বিস্তীর্ণ এলাকা তিন-চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও পানির উচ্চতা আরও বাড়ছে। এতে করে তরমুজসহ রবিশস্যের এরইমধ্যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসেবে জেলার কেবলমাত্র সাগরপাড়ের গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।সমগ্র জেলায় ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। কৃষি বিভাগ থেকে আর্থিক সহায়তার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ রবিশস্য চাষীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। গত ২৮ মার্চ রবিবার থেকে জেলায় পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারে পানির উচ্চতা বাড়ছে। প্রতিদিন চব্বিশ ঘন্টায় দুবার জোয়ার হচ্ছে। প্রতিবার জোয়ারে অন্তত ৮-১০ ঘন্টা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। জেলার নিচু চর ও দ্বীপগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় তরমুজসহ রবিশস্য আবাদকারীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পরেছেন। দক্ষিণ বোয়ালিয়া, পক্ষিয়া, চরখালী, পশ্চিম গোলখালী, চরনজির, চরআগস্তি, কাউখালী, ছোটবাইশদিয়া ও মৌডুবী এলাকার কয়েকজন চাষী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের বাইরের প্রায় সমস্ত খেত হাটু পানিতে ডুবে যাচ্ছে। এসব এলাকার বহু চাষী আদৌ কোন ফসল ঘরে তুলতে পারবে কি না, এনিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। এরমধ্যে তরমুজের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কোন কোন নিচু চর ও দ্বীপে তরমুজচাষীদের ডুবে যাওয়া খেত থেকে ফসল বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে দেখা গেছে। আবার বহু চাষীকে লোকসান গুনে হা হুতাশ করতে দেখা গেছে। পশ্চিম গোলখালী গ্রামের মজিবর হাওলাদার জানান, তিনি প্রায় লাখ দুয়েক টাকা খরচ করে দুই হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এতে তার অন্তত তিন লাখ টাকা লাভের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু একটি তরমুজও বিক্রি করতে পারেন নি। পুরো খেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। একই এলাকার ক্ষুদ্র চাষী আলাউদ্দিন হাওলাদার ৮০ হাজার টাকা খরচ করে এক হেক্টর জমিতে তরমুজ লাগিয়েছেন। যখন তরমুজ বিক্রি করার সময় এসেছে, তখনই পানিতে সব তছনছ হয়ে গেছে। আরেক চাষী শহীদুল গাজীর দুই হেক্টর জমির তরমুজ পানিতে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়া ফসলের খেত দেখিয়েএকই ভাবে আরও কয়েকজন চাষী আক্ষেপ করে জানান, খেতের চারপাশে বেড়িবাঁধ না থাকাই চাষীদের সর্বনাশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামনে আরও চার-পাঁচদিন একই ভাবে জোয়ারের পানির চাপ থাকবে বলেও চাষীরা জানান। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও চাষীদের ধারণা। জোয়ারের পানিতে চাষীদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতির তথ্য জানিয়ে রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা উপজেলার কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এরইমধ্যে দুই উপজেলায় অন্তত সাড়ে তিন কোটি টাকার ফসলের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।এতে চার শ’য়ের বেশি চাষী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরমধ্যে গলাচিপা উপজেলায় তরমুজের ক্ষতি হয়েছে ১১২ হেক্টর, মুগডাল ৮২ হেক্টর, মরিচ ৪২ হেক্টর ও অন্যান্য রবিশস্য আরও ৩০ হেক্টর জমির। রাঙ্গাবালী উপজেলায় তরমুজের ক্ষতি হয়েছে ৮৮ হেক্টর জমির। অন্যান্য রবিশস্য ক্ষতি হয়েছে আরও ২৮ হেক্টর জমির। বেসরকারী হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই ভাবে দশমিনা উপজেলাসহ পটুয়াখালী জেলার অন্যান্য নিচু এলাকাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ জানান, জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের আর্থিকসহ অন্যান্য ভাবে সহায়তা করার জন্য তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। এছাড়া, আগামি তিন-চারদিনের মধ্যে জেয়ারে পানির চাপ কমে আসবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply