আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি ॥ “মহামারিত্তোর বিশ্বে ঝুঁকি প্রশমন, কর্মক্ষেত্রে সুযোগ হবে প্রসারণ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সারা বিশ্বের মতো বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ১৪তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত হয়েছে। করোনা মহামারিকালে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির কর্মক্ষেত্র ও নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় এবছর দিবসটি অনাড়ম্বরভাবে পালন করা হয়েছে। জানা গেছে, শুক্রবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সচেতনতায় বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বখতিয়ার আল মামুনের সভাপতিত্বে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মামুন মোল্লা, ডাঃ সৈকত জয়ধর, ডাঃ সমীরন হালদার, ডাঃ ফয়সাল ফাহাদ চৌধুরী, ডাঃ জাহেদ হোসেন, ডাঃ আলামিন হোসাইন, ডাঃ হাফিজুর রহমান দিপু, ডাঃ রাজু বিশ্বাস, ডাঃ মিজানুর রহমান, ডাঃ সাবিনা আফরোজ, ডাঃ নূরে জান্নাত বাঁধন, ডাঃ অনামিকা বিশ্বাস, প্রধান অফিস সহকারী মিজানুর রহমান সিকদার, স্যানেটারী ইন্সেপেক্টর সুকলাল সিকদার, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ইপিআই মিজানুর রহমান, পরিসংখ্যানবিদ শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বখতিয়ার আল মামুন জানান, অটিজম স্পেক্ট্রাম স্নায়ুবিকাশজনিত বৈচিত্র যার প্রকৃত কারণ আজও চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাছে অজানা। অটিজম স্পেক্ট্রামের ফলে একটি শিশুর জন্মের ১৮-২৪ মাস পর থেকে নানা ধরনের বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশগত সমস্যা দেখা যায়। কখনও কখনও অটিজম সম্পন্ন ব্যক্তির মধ্যে একাধিক স্নায়ুবিক বিকাশগত সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় কুসংস্কারের কারণে অধিকাংশ অটিজম স্পেক্ট্রাম বৈকল্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তি সমাজের মূল স্রোতের বাইরে রয়ে গেছে। অটিজম স্পেক্ট্রাম সম্পন্ন ব্যক্তির যথাযথ যত্ন, শিক্ষা প্রদান ও চিকিৎসা করলে তারাও একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো দেশের উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে। মূলত অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ, ভাব বিনিময় ও আচরণগত সমস্যা দেখা যায়। এ সকল কারণে অভিভাবকগণ তাদেরকে সুস্থ শিশু থেকে আলাদা করে ফেলে এবং অজ্ঞতার কারণে এ সমস্যাকে প্রাকৃতিক অভিশাপ বলে শিশুকে সমাজ থেকে লুকিয়ে রাখার প্রবণতাও দেখা যায়। অটিজম বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলে পরিবার ও সমাজের বোঝা না হয়ে সম্পদে পরিণত হবে। এ বিষয়ে অভিভাবক বিশেষ করে মায়েদের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলে শিশুর বেড়ে ওঠার সময়ে কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্যণীয় হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ করলে জটিলতা অনেকটাই কাটিয়ে উঠা যায়। এ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে যথাযথ বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাদের বিকাশ ও স্বাভাবিক মানুষের মতো হয়। অটিজম কোন অভিশাপ নয়, এটি সৃষ্টিরই রহস্য একে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে প্রদানকৃত চিকিৎসা, পরামর্শ, সেবা গ্রহণ করে গাইডলাইন অনুযায়ী যত্ন নিলে তারা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। সর্বোপরি স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে প্রতিটি পরিবারের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি ও সরকারী সেবাপ্রাপ্তির বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করে অটিজম স্পেক্ট্রাম বৈকল্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের মেধা বিকাশের পরিবেশ ও একটি বাসযোগ্য সমাজ নিশ্চিত করা প্রতিটি সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব।
Leave a Reply