দখিনের খবর ডেক্স ॥ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে মানুষকে রক্ষায় সারাদেশের ন্যায় বরগুনার আমতলীতে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারনা ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হলেও মানুষ তা মানছেন না। মানুষ যে সচেতন হয়েছেন সেটা লক্ষ করা যাচ্ছে না। সচেতনতার অভাবে ছড়িয়ে পড়ছে গুজব। এ কারনে মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ফলে করোনা ভাইরাসের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে এ এলাকার মানুষ । দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে সকল মানুষকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হলেও জনসমাগম থামানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন হাটে বাঁজারে দেদারছে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ। হোটেল রেস্তোরা, চায়ের দোকানগুলোতে অধিক সংখ্যক লোকজনকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। অফিস আদালতে বন্ধ না থাকায় বাধ্যহয়ে সেখানেও একত্রে অনেক লোকজনকে জড়ো হতে হচ্ছে। এমনকি বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হিমসিম খাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। খোদ স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকদের সুরক্ষায়ও নেই কোন ব্যবস্থা। এ কারনে অনেক চিকিৎসক সর্দি, জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের চিকিৎসা না করে অন্য হাসপাতালে প্রেরণ করে দিচ্ছেন।
এদিকে করোনা ভাইরাস আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়ায় ও করোনা প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশের উদ্যোগে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, হাসপাতালে আইসোলেশন রুম তৈরি, গুজব স¤র্পকে জনসাধারনকে বিরত থাকতে সতর্কতা, ঘর থেকে বাহির না হওয়া, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াস দিয়ে হাত দোয়া, মুখোশ বিতরণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরামর্শ প্রদান, হোম কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তিদের সার্বক্ষণিক ফলোআপসহ নানা সতর্কতা মূলক পদক্ষপ গ্রহন করা হয়েছে। তারপরেও মানুষের মাঝে তেমন কোন সচেতনা লক্ষ করা যাচ্ছে না।ং সচেতনতার অভাবে ছড়িয়ে পড়ছে গুজব। এ কারনে মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করায় মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে এ এলাকার মানুষ।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার গাজীপুর বন্দরের মনিরের চায়ের দোকানে বসে ৭/৮ জন অজ্ঞাত লোক একত্রে বসে চা ও সিগারেট খাচ্ছিল আর আড্ডা দিচ্ছিল। দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোভ দেখা দিয়েছে তা তারা জানেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তার কোন উত্তর না দিয়ে যে যার মত করে চলে যায়। পৌরসভার বাসিন্ধা আঃ আজিজ (৬০) বলেন, “নতুন বোলে একটা ভাইরাজ আইছে হে কথা হুনছি, এডা একটা আল্লাহর গজব, আল্লাহই মোগো এ গজব থেইক্যা রক্ষা হরবেন।
উপজেলার মহিষডাঙ্গা গ্রামের দিনমজুর মনির মুন্সী (৪৫) জানান, “মুই দিন মজুরের কাজ হইর্যা খাই। পেটের ধান্ধায় মোর প্রত্যেকদিন ঘর অইতে বাইর অইতেই হইবে। গরীবের আবার ভাইরাজের ভয় কি”?
চাওড়া ইউনিয়নের পূর্বপাতাকাটা গ্রামের দিন মজুন আঃ মজিদের স্ত্রী গৃহবধূ মোসাঃ হনুফা বেগম জানেন না করোনা ভাইরাস কি, এ ভাইরাস হইলে কি হয়, হইলে সে কি করবে? উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, এখন পর্যন্ত আমতলীতে করোনা ভাইরাসের কোন রোগী শনাক্ত হয়নি। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি। তারপরেও কেহ করোনায় আক্রান্ত হলে সে জন্য আমাদের হাসপাতালে তার জন্য শয্যাসহ সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মানুষ তো তেমন একটা সচেতন হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। এখনো মানুষকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি।
আমতলী পৌরসভার মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, করোনা সচেতনতার জন্য পৌরসভার সর্বত্র মাইকিং, সকল শ্রেণী পেশার মানুষদেরকে নিয়ে মতবিনিময় সভা, সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে পৌর কমিটি ও ৯ ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারপরেও মানুষ কেন সচেতন হচ্ছে না সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, করোনার ভাইরাসের কারনে পৌরসভায় একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন বলেন, করোনা প্রতিরোধে এ উপজেলা মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং লিফলেট বিতরণসহ নানা সতর্কতা মুলক পদক্ষপ নেওয়া হয়েছে। এত কিছু পদক্ষেপ নেয়ার পরেও মানুষ যদি সতর্কতা অবলম্বন না করে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়া যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
Leave a Reply