বেতাগী প্রতিনিধি ॥ উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ খাবার টেবিলে আবার ফিরে আসছে। চাষাবাদ ও জলাশয়ে অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার ফলে এসব মাছের দেখা আবারো পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমান প্রজন্মের কাছে এসব মাছের প্রাচুর্য ও স্বাদ কেবল গল্প হলেও ধীরে ধীরে সত্য হতে চলছে এবং বেড়েছে চাহিদা। জানা গেছে, গত কয়েক বছর আগেও এ অঞ্চলের হাট বাজারগুলোতে শোল, বোয়াল, গজার, পাবদা, পুঁটি, কৈ, ভেদী, খলিশা, বাউস, কাল বাউস, টেংরা, বাইন, শিং, মাগুর, মনান্তি, চিংড়ি তেমন পাওয়া যেত না। তবে রুই, কাতলা ও কাপ জাতীয় মাছ পাওয়া যেত। এসব বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করায় পোনা প্রাপ্তি সহজতর হয়েছে। অনেকে চাষাবাদেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। মৎস্য গবেষজ্ঞদের মতে, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন দেশের প্রায় শতাধিক হ্যাচারিতে দেশি প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। পরে এসব মাছ ব্যবহার করা হচ্ছে চাষাবাদে। প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যবহার ও অভ্যন্তরীণ উম্মুক্ত জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় এসব মাছ বিলুপ্তির মূল কারণ। দেশি প্রজাতির এসব মাছকে বিলুপ্তের হাত থেকে বাঁচাতে গবেষণা শুরু করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান। গবেষজ্ঞদের মতে, এখন অনেকটাই সহজলভ্য বিপন্ন প্রজাতির পাবদা, গুলশা, টেংরা, মেনি, চিতল এবং ফলি মাছ। দামও নাগালে। বছর দুয়েক আগেও পাবদা মাছ এক হাজার থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৫শ টাকার নিচে নেমে এসেছে। কয়েক বছর আগের তুলনায় হাট বাজারগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এ পর্যন্ত ২০ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হচ্ছে- পাবদা, গুলশা, টেংরা, মেনি, ফলি, চিতল, গুতুম, গুজি, আইড়, কুচিয়া, খলিশা, গনিয়া, কালবাউস, ভাগনা, মহাশোল ও দেশি পুঁটি। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ও পবেষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে বর্তমানে দেশে যশোর, সৈয়দপুর ও ময়মনসিংহ গবেষণা কেন্দ্র থেকে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তরও অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব দেশি মাছ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কাজ করছে। তিনি আরো জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণ উম্মুক্ত জলাশয় সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় দেশি মাছের প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র কমে গেছে। ফলে প্রাকৃতিক জলাধার যেমন বিল, হাওড়, খাল-বিল ও নদ-নদীতে এসব মাছের প্রাপ্যতা হ্রাস পেয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন জানায়, দেশি মাছে আমিষের উপাদানের পরিমাণ বেশি। বর্তমানে দেশি মাছ করার আগ্রহ বেড়েছে। যার ফলশ্রুতিতে হাট-বাজারে আগের তুলনায় বেশি দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
Leave a Reply