বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রায়ণ প্রকল্প -২ এর দ্বিতীয় ধাপে হতদরিদ্রদের ত্রাণের ঘর দেয়ার নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা আদায়ের প্রতিবাদ করায় হলদিয়া ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার রাতে গুরুতর আহত সাদ্দাম মৃধা, রুহুল আমিন মৃধা ও দুলাল মৃধাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার সন্ধ্যায়। হতদরিদ্রদের ঘর দেয়ার নামে টাকা আদায়ের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন। জানাগেছে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রায়ণ প্রকল্প-২ এ অধীনে দ্বিতীয় ধাপে আমতলী উপজেলায় হতদরিদ্রদের জন্য ৩’শ ৫০ টি ঘর বরাদ্দ দেয় সরকার। ওই প্রকল্পের হলদিয়া ইউনিয়নে ২০ টি ঘর বরাদ্দ দিয়েছে ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান। ঘর বরাদ্দের বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম মৃধা অবগত নন। ওই ঘর দেয়ার নামে উত্তর টেপুরা গ্রামের সৈয়দ মুন্সির ছেলে মোঃ জহিরুল ইসলাম হতদরিদ্রদের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। ঘর দেয়ার নামে জহিরুল ইসলামের টাকা আদায়ের বিষয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ মাসুদ মৃধা প্রতিবাদ করেন। কাঠালিয়া গ্রামের সাদ্দাম মৃধা, রবিউল ইসলাম, দুলাল মৃধা ও সুমন টাকা আদায়কারী মোঃ জহিরুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে ইউপি সদস্যের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায় সাদ্দাম মৃধা ইউপি সদস্য মাসুদ মৃধাকে লাঞ্ছিত করে। ইউপি সদস্যকে লাঞ্ছিতের ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সাদ্দাম মৃধা (৩২), দুলাল মৃধা (৪৫), বেলাল (২৫), হৃদয় (২০), সোহাগ মৃধা (৪০), রুবেল মৃধা (৩২), রুহুল আমিন মৃধা (৩৫), স্বাধীন মৃধা (১৬) ও রবিউল (৩০) আহত হয়। গুরুতর আহত সাদ্দাম মৃধা, রুহুল আমিন মৃধা ও দুলাল মৃধাকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মোঃ ইমদাদুল হক চৌধুরী তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। হতদরিদ্রদের ঘর দেয়ার নামে টাকা আদায়ের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন। কুলাইরচর গ্রামের মজিদ গাজী ও নুরু গাজী বলেন, আমার এতিম ভাগ্নে হিরণ মোল্লার নামে ৩৭ হাজার টাকা চুক্তিতে জহিরুল ইসলামের মাধ্যমে একটি ঘর পেয়েছি। ওই চুক্তির ৩২ হাজার টাকা জহিরুলকে দেয়া হয়েছে। বাকী টাকা ঘর তোলার পরে দেয়া হবে। তারা আরো বলেন, ইতোমধ্যে ঘর তোলার মালামাল এসেছে। আহত রবিউল মৃধা মারধরের কথা স্বীকার করে বলেন, জহিরুল ইসলাম ইউনিয়নে ঘর দিচ্ছেন। হলদিয়া ইউপি সদস্য মোঃ মাসুদ মৃধা বলেন, জহিরুল ইসলাম ঘর দেয়ার নামে ইউনিয়নের অনেক মানুষের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করছে। আমি এর প্রতিবাদ করলে জহিরুল ইসলামের সহযোগী মোঃ সাদ্দাম মৃধা, রবিউল ও দুলাল মৃধা আমাকে লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনায় মারধরের ঘটনা ঘটেছে। জহিরুল ইসলাম টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামানের নির্দেশে তদারকি করছি। আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম মৃধা বলেন, ইউনিয়নে ঘর বরাদ্দের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ণ প্রকল্পের অধীনে ঘর দেয়ার নামে জহিরুল ইসলাম অনেকের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। ঘর দেয়ার নামে জহিরুলের টাকা আদায়ের প্রতিবাদ করায় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মাসুদ মৃধাকে জহিরুলের লোকজন লাঞ্ছিত ও মারধর করেছে। আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, মারধরের ঘটনা শুনেছি। তবে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply