নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকায় অবৈধ ইটভাটাটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৫ দিন পর আবার ওই ইটভাটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেখানে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। ইটভাটাটির নাম মাওয়া ব্রিকস। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামে ওই ভাটার অবস্থান। এর মালিক রাসেল পণ্ডিত রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। তাঁর বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখল করে ভাটাটি নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। প্রায় দুই বছর আগে মাওয়া ব্রিকস নির্মাণ করা হয়। অনুমোদন না থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে গত ৯ মার্চ ভাটার ড্রাম-চিমনি ভেঙে পানি ঢেলে দেয়। তবে ২৩ মার্চে আবার ভাটা চালু করা হয়। এ সম্পর্কে রাসেল পণ্ডিত বলেন, ভাটার বেশির ভাগ জমি তাঁর ক্রয় করা সম্পত্তি। কিছু জমি এখনো কিনতে বাকি আছে। দ্রুত জমির মালিকের সঙ্গে নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। ভাটার অনুমোদন নেই স্বীকার করে রাসেল বলেন, অনুমোদন চাওয়ার আগে ভাটাটি পরিবেশের ছাড়পত্র পাওয়ার উপযোগী করতে হবে। সে কারণেই ইট পোড়ানো হচ্ছে। উপজেলার শশীভূষণ থানার রসুলপুর ডিগ্রি কলেজ, রসুলপুর সেতু ও শশীভূষণ লঞ্চঘাটের পাশ দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে করিমপুর গ্রামের দিকে একটি কাঁচা সড়ক চলে গেছে। কলেজ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মাওয়া ব্রিকসের অবস্থান। গত শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা সড়কে কেবলই ধুলা। ট্রাক্টর ও নছিমনে ইট নেওয়া হচ্ছে। চারদিকে ধুলা উড়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, নিজেদের জমি দিয়ে এই সড়ক বানিয়েছেন তাঁরা। যতবারই সড়কটি উঁচু করা হয়, ততবারই ধুলা হয়ে উড়ে যায়। আর বর্ষাকালে সড়ক ডুবে যায়। শশীভূষণ ও করিমপুর মৌজার মধ্যে প্রায় ২০ একর জমির ওপর ইটভাটাটি গড়ে তুলেছেন রাসেল পণ্ডিত। দুই বছর ধরে গাছ দিয়ে ভাটার ইট পোড়ানো হচ্ছে। করিমপুরের বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন বলেন, তাঁর বসতবাড়িতে ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে। সেই জমি থেকে ২০ শতাংশ রাসেল পণ্ডিত জোর করে নিয়ে ভাটা বানিয়েছেন। জমির দামও দেন না তিনি। হারুন অর রশিদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, তাঁর বাবা ১৯৭৫ সালে সরকারের কাছ থেকে দেড় একর জমি বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে সেই জমি ভোগদখল করে আসছে তাঁর পরিবার। সেই জমিতে বছর দুই আগে রাসেল পণ্ডিত জোর করে ইটভাটা নির্মাণ করেন। এ সম্পর্কে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদ মিয়া বলেন, ‘ইটভাটার জমি নিয়ে মালিকদের সঙ্গে ভাটার মালিকের বিরোধ ছিল। মীমাংসা হয়েছে কি না, জানি না।’ ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অনুমোদন না থাকার কারণে গত ৯ মার্চ শশীভূষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়নের মাওয়া ব্রিকসসহ জেলার ১০টি ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ওই কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুল মালেক মিয়া বলেন, মাওয়ার কোনো কাগজপত্র নেই। আর ভবিষ্যতেও অনুমোদন পাওয়ার আশা নেই। কারণ, ভাটাটির চারপাশে কৃষিজমি ও জনবসতি। মালেক মিয়া আরও বলেন, ‘শুনেছি ভাটাটি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইট পোড়াচ্ছে। লকডাউন উঠলে সেখানে অভিযান চালানো হবে।’ চরফ্যাশনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে ইটভাটায় অভিযান চালাবেন।
Leave a Reply