মো: লুৎফুল হাসান রানা, কলাপাড়া প্রতিনিধি ॥ কুয়াকাটায় কৃষকরা মাঠে বোরো ধান কাটা নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত সময় পার করছে। চোখ যতদূর যায় বিস্তীর্ন মাঠ জোড়া সোনালী ধান। বোরো ধানের পাকা শীষ বাতাসের সাথে সাথে দোল খায়। চারদিকে পাকা ধানের মেী মেী গন্ধে একাকার। সূর্যের আলো উকি দেওয়ার সাথে সাথেই কৃষকরা দল বেধে কাস্তে হাতে নেমে পড়ছেন বোরো ধান ক্ষেতে। ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন ধান কাটায়। দম ফুরানোর ফুরসত নেই। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধান কেটে আঁটি বেঁধে রেখেছেন ক্ষেতের মাঝেই। পড়ন্ত বিকালে সেই আঁটি মাথায় কিংবা গাড়িতে করে বাড়ী ফিরছেন কৃষকরা। বাড়িতে চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানতালে ব্যস্ত রয়েছে। ব্যাপারীরা (যারা ধান ক্রয় করে) বাড়ীতে এসে ধান ক্রয় করে নিয়ে যায়। কোন কোন কৃষক আবার অগ্রিম টাকা গ্রহন করছে তাদের (ব্যাপারীর) কাছ থেকে। এমন পরিবেশ বিরাজ করছে উপকূলীয় অঞ্চল কুয়াকাটাসহ আশেপাশে কৃষকদের পরিবারে। কৃষকদের এমন ব্যস্থতা চলবে আগামি মাস পর্যন্ত এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। এবারে বোরো চাষের জন্য আবহাওয়া মোটেও অনুকূলে ছিলনা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন বৃষ্টির দেখা মেলেনী। ফলে পুরো মেীসুম জুড়ে পুকুর, খাল আর বিলের পানীর উপর নির্ভর করতে হয়েছে। সে তুলনায় ফলনের ঘাটতি হয়নী। বড় কোন ঝড় কিংবা বন্যার কবলে না পড়লে আর্থিকভাবে লাভবান হবে এখানকার কৃষকরা। কলাপাড়া কৃষি অফিসের সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের কৃষকরা পানির অভাবে বোরো চাষে তেমন আগ্রহ দেখাতোনা। গত কয়েক বছর কৃষকদের মাঝে বোরো চাষে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। বাম্পার ফলন আর দামেও বেশি পাওয়ায় এমনটাই হয়েছে বলে জানা গেছে। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক মো: জামাল হাওলাদার (৩৫) এ প্রতিবেদককে বলেন, এবার বোরো ধান চাষ করে ভাল ধান পাইছি। তবে পানির অভাবে খরচটা একটু বেশি হইছে। বাজারে দামও ভালো আছে। কড়া ভুইতে আমার ২মন বা সোয়া ২মন ধান পড়বে। আরেক কৃষক জয়নাল মিয়া (৩০) বলেন, এক সময় আমরা বছরে শুধু আমন ধান দিতাম এখন বছরে আমরা ৩বার ধান উৎপাদন করার চিন্তা করতেছি। বোরো ধানের ফলন ভালো পাওয়ায় আবার মালা চায়না দেওয়ার চিন্তা করছি। ধানের বাজার বর্তমানে চড়া। সার ও পানির সমস্যা সমাধান হলে আমরা আরো অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতাম। আমাদের এলাকার অনেকখাল দখল হয়ে গেছে সেগুলো যদি উদ্ধার করে খাল খনন করে তি তাহলে পানির সমস্যা থাকতনা এলাকায়। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে বাজারে জিরাশাইল প্রতিমন ১০০০ টাকায় এবং বি আর ২৮ ১১০০ থেকে ১১২০ টাকায় বিক্রি হয়। কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আবদুল মান্নান গনমাধ্যমকে বলেন, আমাদের গত বছরের চেয়ে এবারের লক্ষ মাত্রা বেশি নির্ধারন করা হয়েছে। এবারের আবহাওয়া বোরো চাষের জন্য অনুকূল না হলেও সব সময় আমরা কৃষকদের পরামর্ম দিয়ে সাহায্য করছি। ২০১৯ -২০২০ অর্থ বছরে বোরো উৎপাদন হয়েছিল ৯শত হেক্টর জমিতে আর ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে উৎপাদনের মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে ৩ হাজার ১শত হেক্টর বেশি। এবারে প্রতি হেক্টর জমিতে ৫দশমিক ৬ মেট্টিকটন ধান উৎপাদন হবে এমনটা আশা করছি।
Leave a Reply