পটুয়াখালী প্রতিনিধি ॥ করোনার দ্বিতীয় ডেউ অতিক্রম করছে দেশ। এরমধ্যে হঠাৎ প্রতিদিনই জেলায় শত শত মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসা না পেয়ে কিংবা অবহেলায় অনেকে মারাও যাচ্ছেন। গত কয়েকদিনে জেলার মির্জাগঞ্জ, দুমকি এবং পটুয়াখালী শহরেও কয়েকজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী মারা যান। তবে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের খবর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে থাকলেও তাদের কাছে মৃত্যুর কোনো তথ্য নেই। এ ক্ষেত্রে মাঠের চিত্র একেবারের ভিন্ন। জানা যায়, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ৯ এপ্রিল পটুয়াখালী শহরের কলেজরোড এলাকার তালতলা এলাকার বাসিন্দা মৃত রশিদ সরদারের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৬০) মারা যান। মৃত মমতাজ বেগমের স্বজন সাদ্দাম বলেন, বুধবার (৭ এপ্রিল) রাতে পাতলা পায়খানা এবং বমি শুরু হয়। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) স্থানীয় এক চিকিৎসককে ডেকে স্যালাইন পুশ করা হয়। সে সময়ে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবারও পাতলা পায়খানা ও বমি শুরু হয়। পরদিন শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯ টায় মমতাজ বেগম মারা যান। তবে জেলা শহরে ডায়রিয়ায় এই নারীর মৃত্যু হলেও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে এই মৃত্যুর তথ্য নেই। একইভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যে মানুষ মারা যাচ্ছেন, তার তথ্য অনেকটাই অজানা থেকে যাচ্ছে। এদিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহে জেলার মির্জাগঞ্জে অন্তত আটজন ব্যক্তি মারা গেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এদের কেউই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন না। মৃত ব্যক্তিরা হলেন মাধবখালী ইউনিয়নের সমাদ্দারকাঠী গ্রামের রাকিব খন্দকারের মেয়ে সাহারা সানফুল (১৫), উত্তর মাধবখালী গ্রামের মৃত মহব্বত আলীর ছেলে মন্নাফ হাওলাদার (৫০), মাধবখালী গ্রামের মৃত বন্দে আলীর ছেলে নুর মোহম্মদ সিকদার (৮০) ও উত্তর মাধবখালী গ্রামের দেনছে আলীর স্ত্রী কহিনুর বেগম (৫৫)। মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের মৃত ফরমানের ছেলে আলীমদ্দিন (৭৫), একই গ্রামের মৃত গনি হাওলাদারের স্ত্রী আনোয়ারা (৭০), মৃত করিম নেগাবানের মেয়ে ফরিদা বেগম (৫০) ও মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামের মৃত ইকরাম সিকদারের ছেলে আলেক (৫০)। এদের মধ্যে সোমবার (৫ এপ্রিল) সকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান মন্নাফ হাওলাদার ও ফরিদা বেগম। রোববার (৪ এপ্রিল) দুপুরে সাহারা সানফুল, আনোয়ারা, আলীমদ্দিন ও একই দিন তারাবুনিয়া গ্রামে আলেক মারা যান। গত শনিবার (১০ এপ্রিল) মাধবখালী গ্রামে নুর মোহাম্মদ সিকদার এবং ১২ এপ্রিল রাতে উত্তর মাধবখালী গ্রামের কহিনুর বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এদিকে এক সপ্তাহে জেলার দুমকি উপজেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের রফিক মুন্সি (৪৫), জলিশা গ্রামের আব্দুল হক মুন্সি (৭০) এবং শিশু আকিব খান। পটুয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সদর উপজেলায় ১০ জন, বাউফলে ৪০, কলাপাড়ায় ১২, দশমিনায় ২৫, গলাচিপায় ৪০, মির্জাগঞ্জে ৯৩, দুমকিতে ১৭ এবং পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৬ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। আর এক সপ্তাহে জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৭৯ জন। সিভিল সার্জন ডা. জাহংগীর আলম সিপন বলেন, ‘এ পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে অবহেলা না করে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চলে আশার অনুরোধ করছি। চিকিৎসার জন্য জেলার প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত স্যালাইন এবং ওষুধ মজুত রয়েছে।’
Leave a Reply