ভোলা প্রতিনিধি ॥ ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন ফয়জুন নেছা। গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর রাতে মেয়ে পানি পিপাসায় ছটফট করছিল। মেয়ের পিপাসা দূর করতে ফয়জুন নেছা পানির খালি বোতল নিয়ে ছুটেছেন হাসপাতালের এমাথা-ওমাথা। কিন্তু তিনি পানি পাননি কোথাও। শেষে বাসায় মোবাইল করে দুই লিটার পানি আনিয়েছেন মেয়ের জন্য। শুধু ফয়জুন নেছা নয়, দ্বীপ জেলার সবচেয়ে আধুনিক সরকারি হাসপাতাল ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সবারই অভিজ্ঞতা এক। এমনকি চিকিৎসক ও নার্সদেরও পানি পান করার জন্য হাসপাতালে কোনো ব্যবস্থা নেই। এ হাসপাতালে বিশুদ্ধ পানি সরবারহের জন্য তিনটি টিউবওয়েল বসানো হলেও দুটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। একটি কোনোরকমে মৃতপ্রায় হয়ে পানি দিচ্ছে। যা হাসপাতালে আসা রোগীদের মোটেই চাহিদা পূরণ করতে পারে না। বাধ্য হয়েই হাসপাতালের বাইরে গিয়ে কারো আত্মীয়, প্রতিবেশী কিংবা অটো বা রিকশা ভাড়া করে নিজের বাড়ি থেকে বোতলে পানি আনতে হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোলা সদর হাসপাতালের ভেতরে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের সামনে থাকা টিউবওয়েলের পাইপ ছাড়া কিছুই নেই। একইভাবে মেডিসিন ওয়ার্ডের সামনে থাকা টিউবয়েলটি বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। তবে হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে একটি টিউবওয়েল আছে। সেটি প্রায় নষ্ট। হাসপাতাল প্রশাসন জানিয়েছে, প্রতিদিন হাসপাতালটিতে ৩ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। আর প্রায় চার শতাধিক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগী ও স্বজনদের বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা মেটাতে টিউবওয়েল নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের দ্বারস্থ হলেও বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু টিউবওয়েলের ব্যবস্থা হচ্ছে না। ভোলা বাংলাবাজার থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মাইনুদ্দিন বলেন, হাসপাতালের ভেতরে খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। বাইরে একটি টিউবয়েল আছে, তাও নষ্ট। সেটিতে দুই লিটারের একটা বোতল ভরতে আধাঘণ্টা সময় লাগে। ভোলা জেলা সচেতন নাগরিক ফোরামের সদস্য সচিব মো. বাহাউদ্দিন জানান, সদর হাসপাতালে খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। যা একটা আছে সেটি আবার অকেজো। সদর হাসপাতালে অতিদ্রুত পর্যাপ্ত টিউবওয়েল স্থাপন করা প্রয়োজন। তা না হলে প্রতিদিন যে হারে ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগী হাসপাতালে আসছে তারা বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকটের কারণে বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হবে। ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সিরাজ উদ্দিন জানান, আমি পানি সমস্যার বিষয়টি জানি। হাসপাতালে আমাদের নিজস্ব সাপ্লাইয়ের পানি আছে। ধোয়া মোছাসহ অন্যান্য কাজের জন্য আমাদের সাপ্লাইয়ের পানি ব্যবহার করা হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ইঞ্জিনিয়ারকে অবগত করা হয়েছে হাসপাতালের বিকল টিউবওয়েলগুলো মেরামত করার জন্য। তিনি আরও জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আমাদের জানানো হয়েছে হাসপাতালের বিকল টিউবওয়েলগুলো মেরামতের দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। তাই আমরা পুনরায় গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীকে অবহিত করেছি।
Leave a Reply