নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় দেড় সহস্রাধিক বিত্তবানের নাম রয়েছে। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে ইউনিয়ন পর্যায়ের এ কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান এবং মেম্বাররা এসব বিত্তবানকে বছরের পর বছর এ কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরে বছরের পাঁচ মাস চাল দিয়ে আসছে। ফলে সরকারের খাদ্য নিরাপত্তার স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর বঞ্চিত হচ্ছে দুস্থ পরিবার। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নীতিমালায় নির্দেশনা রয়েছে গ্রামে বসবাসরত সবচেয়ে হতদরিদ্র পরিবার, ভূমিহীন, কৃষিশ্রমিক, দিনমজুর, উপার্জনে অক্ষম এসব পরিবারকে এই সুবিধার আওতায় আনার। এর মধ্যে আবার বিধবা/তালাকপ্রাপ্তা/ স্বামী পরিত্যক্তা/অস্বচ্ছল বয়স্ক নারীপ্রধান পরিবার দুস্থ পরিবারে শিশু বা প্রতিবন্ধী রয়েছে তারা এই সুবিধায় অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। তবে কোন ক্রমেই একই পরিবারের একাধিক কার্ড কিংবা ভিজিডির সুবিধাপ্রাপ্তরা এই সুবিধা পাবেন না। কিন্তু সরকারের এসব নীতিমালা উপেক্ষা করে জনপ্রতিনিধিরা তাদের পছন্দসই সমর্থক ভোটারসহ আত্মীয়-স্বজনকে এই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছেন। তালিকাপ্রাপ্তরা বছরের মার্চ-এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর-নবেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাস এই খাদ্য সহায়তা পাবেন। এই পাঁচ মাস গ্রামীণ জনপদে উপরোক্ত শ্রেণির দরিদ্র মানুষ বেকার হয়ে থাকেন। তাই বিভিন্ন সুবিধার মতো এই খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে কলাপাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ চলছে। গেল বছর এ কর্মসূচির তালিকায় অনিয়ম নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে উপজেলা কমিটির নির্দেশনায় যাচাই-বাছাই করা হয়। যেখানে ২৮০০ নাম বদল করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অতিদরিদ্র্র বহু পরিবার ঠিকই বাদ পড়েছেন। যারা টাকা দিয়েছেন কিংবা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের স্বজন তাঁদের নাম অন্তর্ভূক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। ফের চাল বিতরণ শুরু হলে এই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় পাওয়া যাচ্ছে বিত্তবান ব্যক্তির নাম। ফলে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চরমভাবে বিতর্কিত হচ্ছে। কলাপাড়ায় ১২টি ইউনিয়নে এ তালিকার কার্ডধারী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ১৫৩ পরিবার। যারা বছরের পাঁচ মাসে প্রত্যেককে ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা। সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রত্যেক ইউনিয়নে কমপক্ষে ২০০ নাম রয়েছে যারা বিত্তবান। ১২টি ইউনিয়নের সবকটিতেই তালিকা নিয়ে রয়েছে অভিযোগ। এক শ্রেণির সরকারি দলের ক্যাডাররা নিজেরা কাগজপত্রে ডিলার সেজে সরকারের মহতি উদ্যোগকে বিতর্কিত করার জন্য এমন হরিলুটে নেমেছে বলে ত্যাগী আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম রয়েছে এই সুবিধাভোগী পরিবারের তালিকা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে টানিয়ে রাখার। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। ইতোপূর্বে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা রয়েছে ডিলারের দোকানে কার্ডধারীর নামের তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হবে। কিন্ত এটি দৃশ্যমান পাওয়া যায়না। আর ডিলাররা অধিকাংশ ব্যবসায়ী নয়। এই চাল যথাযথভাবে বিতরনের জন্য ৩২ ডিলার নিযুক্ত রয়েছেন। এটি মনিটরিং করতে রয়েছেন একজন করে কর্মকর্তা। সরকারের খাদ্যবান্ধব এ কর্মসূচি গরিব মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এসব তালিকা প্রকাশ্যে টানিয়ে দিলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে সচেতনমহলের দাবি।
Leave a Reply