ভাণ্ডারিয়া প্রতিনিধি ॥ পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় ডায়রিয়া পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই ডায়রিয়া রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন- দক্ষিণ ভাণ্ডারিয়া মহল্লার মো. ফজলুল হকের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৪৫) এবং কাঠালিয়া উপজেলার দক্ষিণ চেঁচরী গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে জাহিদ হাসান(৯ মাস)। এদের মধ্যে মমতাজ বেগমের করোনা নমুনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে। দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া রোগীতে ওয়ার্ড পরিপূর্ণ। মেঝে ও বারান্দাতেই কোথাও জায়গা ফাঁকা নেই। চিকিৎসকরা সেবা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রোগীর স্বজনরা। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড না থাকায় মেঝে, করিডর এমনকি বারান্দাসহ যে যেখানে পারছেন চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী। গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছেন ৪৫ জন আক্রান্তদের মধ্যে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-শিশু-পুরুষ মিলে গত এক সপ্তাহে ২১৭ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং একমাসে মোট ৭২৯ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ডায়রিয়া রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় রোগ নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণ সহজ হচ্ছে না। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজন রোগী জানান, হাসপাতালে রোগীর চাপ এবং বেড না পেয়ে অতি কষ্টে বাধ্য হয়ে তাদেরকে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। এতে করে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এছাড়া হাসপাতালে টয়লেট সংখ্যা সীমিত, যা আছে তাও ব্যবহারের অনুপযোগী। টয়লেটে যাওয়ার জন্য রোগীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়,যা ডায়রিয়া রোগীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী সালমা বেগম জানান, সকালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কোন জায়গা না পেয়ে মেঝেতে আছেন। হাসপাতাল থেকে ওষুধ ও কলেরা স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রেজাউল ইসলাম জানান, গড়ে ৪০ জনেরও বেশি নতুন ডায়রিয়ার রোগী দিনে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালে নতুন ও পুরাতন মিলে সব সময় শতাধিক ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি থাকছেন। এদের চিকিৎসা দিতে তারা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন। এ ছাড়াও পাশ্ববর্তী কাঠালিয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী এখানে এসে ভর্তি হচ্ছেন বলেও জানান তিনি। উপজেলা স্বাস্থ্য পঃপঃ কর্মকর্তা ননী গোপাল রায় ডায়রিয়ায় দুই জনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করে বলেন, ডায়রিয়া পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারন করছে। এটা করোনাভাইরাসের কারণেও হতে পারে। গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ওষুধপত্র এখন পর্যন্ত যা আছে আমরা সামাল দিয়ে চলছি। তবে এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে ওষুধ সংকট দেখা দিবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়ার জন্য সিভিল সার্জনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply